ইদানিং ভারতকে বিশ্বের 'ডায়াবেটিসের রাজধানী' বলা হয়। বর্তমানে ১০১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই জীবনধারা-সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটে থাকা অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্ট (AGE) নামক ক্ষতিকর যৌগগুলো ভারতের ডায়াবেটিস সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এবং মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চেন্নাই।
গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল:
গবেষণায় ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৩৮ জন অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূল প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ১২ সপ্তাহের জন্য দুটি আলাদা ডায়েটের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে—একটি ডায়েট AGE-তে উচ্চ এবং অন্যটি কম। এই গবেষণায় ক্রসওভার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী উভয় ধরনের ডায়েট অনুসরণ করেছেন।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফুড সায়েন্সেস অ্যান্ড নিউট্রিশন-এ। এতে দেখা গেছে, কম AGE ডায়েট অংশগ্রহণকারীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে এবং খাওয়ার ৩০ মিনিট পর রক্তে শর্করার মাত্রাও কম দেখিয়েছে। অন্যদিকে, উচ্চ AGE ডায়েটের কারণে অংশগ্রহণকারীদের রক্তে উচ্চ মাত্রার প্রদাহজনক মার্কার পাওয়া গেছে, যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
AGE ও ক্ষতিকারক প্রভাব:
AGE তৈরি হয় যখন খাদ্য উচ্চ তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত বা ভাজা হয়, বিশেষত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ভাজা পদে। এগুলো শরীরে প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গবেষকরা নিম্নলিখিত খাবারগুলোকে উচ্চ AGE-এর প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন:
ভাজা খাবার: চিপস, সমোসা, পাকোড়া
বেকড পণ্য: কুকিজ, কেক, ক্র্যাকার
প্রক্রিয়াজাত খাবার: মার্জারিন, মেয়োনিজ
উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা মাংস: বেকন, ভাজা মুরগি, গরুর মাংস
ভাজা বাদাম: রোস্ট করা আখরোট, সূর্যমুখী বীজ
ভারতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা:
ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে এসব খাবার খুবই সাধারণ, যা প্রায়শই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, ফলে এগুলোতে AGE-এর মাত্রা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের খাবার কমিয়ে তাজা, প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে। এতে তাদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।
এই গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে একটি কার্যকর পন্থা হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনই ডায়াবেটিস মহামারী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।