ওজন কমানোর ইঞ্জেকশনওজন বেশি থাকা বা স্থূলতা বিরাট বড় সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, শরীরে মেদ বেশি থাকার কারণে একাধিক সমস্যা নিতে পারে পিছু। তাই এমন পরিস্থিতিতে ওজন কমানোর পক্ষেই সওয়াল করেন তাঁরা। আর এই তাগিদ নিয়েই অনেকে এক্সারসাইজ ও ডায়েট করছেন। শুধু তাই নয়, ওজন কমানোর ইঞ্জেকশন Mounjaro এবং Wegovy নেওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে। আর এই ইঞ্জেকশনগুলি এখন খুবই ভাইরাল।
আর এই বিষয়টা সম্পর্কে বিশদে জানাতেই ভারতের বিশিষ্ট ৩ চিকিৎসক, ডাঃ অশোক শেঠ (চেয়ারম্যান, কার্ডিয়ার সায়েন্স, ফর্টিস ওখলা), ডাঃ মোনিকা অরোরা (ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ প্রোমোশন, PHPI) এবং ডাঃ প্রজিৎ কৌর (অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটিস, এইমস) উপস্থিত হয়েছিলেন অ্যাজেন্ডা আজতক-এ। এই সেশনটির নাম রাখা হয়েছিল, 'ইঞ্জেকশন লাগাও, মোটাপা হাটাও!'
ওবেসিটি কী?
ডাঃ শেঠ জানান, ভারতীয়দের মূল সমস্যা ভুঁড়ি বা অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি। এছাড়া বডি মাস ইনডেক্সের মাধ্যমে ওবেসিটিকে মাপা হয়। পশ্চিমের দেশগুলিতে ২৭-এর উপরে বিএমআই গেলেই বলা হয় ওবেসিটি। তবে ভারতের পরিস্থিতি আলাদা। কারণ, এখানে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস এবং হাই কোলেস্টেরল খুবই সাধারণ বিষয়। যার ফলে ভারতীয়দের বিএমআই ২৩ থেকে ২৫-এর উপরে গেলেই বিপদ বলে ধরে নেওয়া হয়। এটাই বলে দেয় যে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে নেই।
এখানেই শেষ নয়, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল এবং হাই প্রেশার, ফ্যাটি লিভার থাকলে ওজন কমানো কোনও বিকল্প নয়। এটা করা অনিবার্য। কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওজন কমাতে হবে।
স্কিনি ফ্যাট কী?
অনেককে দেখলে মনে হয় ওজন কম রয়েছে। তবে ভিতর থেকে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। তাদে শরীরে ভালই ফ্যাট রয়েছে। আর এই সমস্যাকেই স্কিনি ফ্যাট বলেন চিকিৎসকেরা। এই প্রসঙ্গে ডাঃ কৌর জানান, শুধু বিএমআই দিয়ে ওবেসিটি যাচাই করা যাবে না। সেই সঙ্গে বডি ফ্যাট পর্সেন্টেজও দেখতে হবে।
যাদের স্কিনি ফ্যাট রয়েছে, তাদের বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তবে শরীরের অন্দরে ফ্যাট জমতে থাকে। বিশেষত, পেটের আশপাশে জমতে থাকে মেদ। এক্ষেত্রে কোমরের মাপ নিলেই সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পুরুষের কোমরের মাপ ৯০ সেমির বেশি হলে এবং মহিলাদের কোমরের মাপ ৮০-এর বেশি হলে সাবধান হতে হবে। এছাড়া নিতম্বের মাপও নিতে হবে। তারপর করতে হবে ওয়েস্ট টু হিপ রেশিও। নিতম্বের থেকে কোমর অনেকটা বড় হলে বুঝতে হবে পেটে বেশি ফ্যাট রয়েছে।
চিকিৎসকের মতে, শরীরে শক্তিশালী পেশি থাকা উচিত। তাহলেই বহু সমস্যা হতে পারে। এই কারণে জমতে পারে ফ্যাট। হতে পারে ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ এবং অন্যান্য জীবনযাত্রাজনিত অসুখ।
জিমে গেলেও হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক...
ডাঃ মোনিকা জানান, জিমে যাওয়া মানুষের মধ্যেও বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক। ব্যালেন্স না থাকাই এক্ষেত্রে সমস্যা বাড়াচ্ছে। আসলে অনেকেই ওজন কমাতে দ্রুত ফল পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিম করছেন। এমনকী নিচ্ছেন সাপ্লিমেন্ট। আর সেটা শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। তাই সাবধান হতে হবে।
ওজন কমানোর ইঞ্জেকশন নিয়ে দুই-এক কথা
ডাঃ কৌর জানান, জিএলপি ১ নির্ভর কিছু ইঞ্জেকশন এবং ওষুধ রয়েছে। জিএলপি ১ খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি বিপাকের হার করে নিয়ন্ত্রণ। তাই ওজন কমাতে এই হরমোন ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের কথা মতোই এই ইঞ্জেকশন নিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ডাঃ শেঠের মত হল, ওজন কমানোর ওষুধকে প্রোমোট করা ঠিক নয়। এই সব ওষুধের ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও রয়েছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া নিলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই ওষুধগুলি ততক্ষণই কাজ করে, যতক্ষণ আপনি সেগুলি নিয়ে যাবেন। নইলে কাজ করবে না।
কীভাবে কাজ করে?
এই ওষুধ এবং ইঞ্জেকশনগুলি, ব্রেনের যেই অংশ খিদেকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলির উপর কাজ করে। ব্রেনকে বোঝায় যে খিদে পায়নি। ফলে ওজন কমে। এটাই হল হিসেব।