পিরিয়ড, একজন মহিলার শরীরের অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি মেয়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেক মেয়েরই মাসে একবার পিরিয়ড হয় এবং এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি যদি অল্প বয়সে শুরু হয়, তবে তা চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। বর্তমান সময়ে, বেশিরভাগ মেয়ের ৯- ১০ বছর বয়সে প্রথম পিরিয়ড হয়। যা, তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়।
খুব কম বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এখন একটি নতুন গবেষণায থেকে জানা যাচ্ছে যে, নিত্য ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিসগুলিতে কিছু রাসায়নিক থাকে। যে মেয়েরা সেগুলি ব্যবহার করেন, তাদের পিরিয়ড বয়সের আগে শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সাবান, সুগন্ধি থেকে বিপদ
গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে কস্তুরী অ্যামব্রেট, একটি সুগন্ধ যা ডিটারজেন্ট, পারফিউম, সাবান এবং অন্যান্য পণ্যতে ব্যবহৃত হয়। এন্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, কোলিনার্জিক অ্যাগোনিস্ট নামক ওষুধও রয়েছে, যা তাড়াতাড়ি ঋতুস্রাব শুরু করায়। এই যৌগগুলিকে বলা হয় 'হরমোন-বিঘ্নকারী' বা 'অন্তঃস্রাব-বিঘ্নকারী'। এগুলি মেয়েদের শরীরের হরমোন ফাংশন ব্যাহত করতে পারে।
১০,০০০ যৌগের উপর গবেষণা
ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)-র গবেষকরা প্রায় ১০,০০০ পরিবেশগত যৌগ পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, এমন অনেক পদার্থ রয়েছে যার জন্য মেয়েদের তাড়াতাড়ি পিরিয়ড হতে পারে। তারা বলেন যে, কস্তুরি অ্যামব্রেটের মতো যৌগগুলির মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলিকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা রয়েছে। গবেষকরা কস্তুরি অ্যামব্রেট সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কারণ এটি বেশিরভাগ ব্যক্তিগত যত্ন পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা বলছেন, সন্তানকে শুধুমাত্র সরকার-অনুমোদিত ব্যক্তিগত যত্ন পণ্য ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
তাড়াতাড়ি পিরিয়ড হওয়ার অন্যান্য কারণ কী?
গবেষকদের মতে, মেয়েদের তাড়াতাড়ি পিরিয়ড হওয়ার শুধু একটি কারণ নয়, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, যা জানা খুবই জরুরি। যার মধ্যে একটি হল, মেয়েদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান স্থূলতা। এখন অল্প বয়সের শিশুরাও বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভুগছে। যেসব মেয়েরা শৈশব থেকেই স্থূল, তাদের তাড়াতাড়ি পিরিয়ড হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এর পাশাপাশি মানসিক চাপও এর একটি বড় কারণ। যখন আমরা অনেক চাপের মধ্যে থাকি, তখন শরীর বেশি করে কর্টিসল এবং অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ করে। ফ্যাট টিস্যু এই হরমোনগুলিকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত করে, যা স্তনের আকার বাড়ায়। ইস্ট্রোজেন নিঃসরণের মাত্রার এই পরিবর্তনও শরীরে পিরিয়ড শুরু হওয়ার সংকেত দেয়।
এছাড়াও পরিবেশে উপস্থিত ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলিও কম বয়সে পিরিয়ডের হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে মেয়েরা যে, ভিন্ন ধরনের কসমেটিক ব্যবহার করে, তা এর একটি কারণ।
বাবা-মাইয়েদের জন্য টিপস
গবেষকরা বলছেন, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের ফলমূল ও শাকসবজি সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। একটি স্বাস্থ্যকর এবং সম্পূর্ণ খাদ্য খাওয়া প্রাথমিক বয়ঃসন্ধি এবং পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বিষয়ই খেয়াল রাখলে তাড়াতাড়ি বয়ঃসন্ধি ও পিরিয়ডের ঝুঁকি কমে যায়। কিছু গবেষণায়, দেরিতে ঘুমানো এবং কম ঘুমের সঙ্গেও প্রাথমিক বয়ঃসন্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, অভিভাবকদের উচিত সবসময় এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখা এবং এর পাশাপাশি সন্তানদের এ সম্পর্কে আগাম তথ্য দেওয়া উচিত। যাতে তারা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে।