Triglycerides: শুধু কোলেস্টেরল নয়, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এত বাড়লে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়

Heart Health Tips: প্রধান উদ্বেগ থাকে যে এলডিএল বেশি আছে নাকি, এইচডিএল কম আছে। কিন্তু সত্যিটা হল, ট্রাইগ্লিসারাইড হল আজকের দিনে অনেক হার্ট অ্যাটাকের পেছনে একটি নীরব কিন্তু বিপজ্জনক কারণ, এবং অনেকে অজান্তেই না অবহেলা করেন।

Advertisement
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এত বাড়লে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়প্রতীকী ছবি

হৃদরোগ, স্ট্রোকের প্রসঙ্গ উঠলেই, বেশিরভাগ মানুষ শুধুমাত্র কোলেস্টেরলের উপরই মনোযোগ দেন। প্রধান উদ্বেগ থাকে যে এলডিএল বেশি আছে নাকি, এইচডিএল কম আছে। কিন্তু সত্যিটা হল, ট্রাইগ্লিসারাইড হল আজকের দিনে অনেক হার্ট অ্যাটাকের পেছনে একটি নীরব কিন্তু বিপজ্জনক কারণ, এবং অনেকে অজান্তেই না অবহেলা করেন।

ট্রাইগ্লিসারাইড কী? 

ট্রাইগ্লিসারাইড এক ধরনের এস্টার জাতীয় জৈব যৌগ যা গ্লিসারল এবং তিনটি স্নেহজ অম্ল (ফ্যাটি অ্যাসিড) অণু নিয়ে গঠিত। ট্রাইগ্লিসেরাইড মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে প্রাপ্ত চর্বি বা মেদের প্রধান উপাদান। এছাড়া এটি উদ্ভিজ্জ স্নেহ পদার্থ বা তেলেরও প্রধান উপাদান। মানবদেহের রক্তেও ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপাদিত হলে রক্তেও এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া মানবচর্মের ঘর্মমেদগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ বা সিবামেও ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকে। রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো রোগের এবং যকৃৎ, স্নায়ু রোগের ঝুঁকি বাড়ে।  

অনেকের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও তারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। সেক্ষেত্রে, চিকিৎসকেরা প্রায়শই দেখতে পান যে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা খুব বেশি। কারণটি সহজ, আমাদের জীবনযাত্রা: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ, ভাজাভুজি খাবার, অ্যালকোহল, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং মানসিক চাপ। এই সমস্ত কারণ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরে চর্বি জমার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর জন্য সব সময় ওষুধের প্রয়োজন হয় না। যদি সময় মতো খাবার এবং কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে ট্রাইগ্লিসারাইডকে প্রাকৃতিকভাবেই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

একটি স্বাস্থ্যকর ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০ mg/dL-এর কম হওয়া উচিত। ১০০ mg/dL-এর কম হলে তা আদর্শ বলে বিবেচিত হয়, ১৫০-১৯৯ mg/dL-কে  সীমান্তবর্তী উচ্চ, ২০০-৪৯৯ mg/dL-কে উচ্চ এবং ৫০০ mg/dL বা তার বেশি হলে খুব উচ্চ বলে মনে করা হয়, যা গুরুতর হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য কী?

Advertisement

কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড উভয়ই আমাদের রক্তে পাওয়া চর্বি। কিন্তু তাদের কাজ, উৎস এবং শরীরের উপর প্রভাব ভিন্ন। এগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ কারণ উভয়ের উচ্চ মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

কোলেস্টেরল

* শরীরের কোষ এবং হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। 

* দুই প্রকার: এলডিএল (খারাপ) এবং এইচডিএল (ভাল)। 

* অতিরিক্ত এলডিএল শিরায় ব্লকেজ সৃষ্টি করে। 

ট্রাইগ্লিসারাইড

* ট্রাইগ্লিসারাইড হল শরীরের শক্তির প্রধান উৎস।

* যখন আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করি, তখন শরীর সেগুলোকে ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত করে এবং চর্বি হিসেবে জমা রাখে।

* উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের ঝুঁকি কী কী? 

* হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি। 

* ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। 

* ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি। 

* পেটের চারপাশে চর্বি বৃদ্ধি। 

ওষুধ ছাড়া ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপায় কী?

মিষ্টি, কেক, বিস্কুট, ঠান্ডা পানীয়, প্যাকেটজাত জ্যুস এবং মিষ্টি চা-কফির মতো সব ধরনের চিনি এড়িয়ে চলুন। কারণ চিনি হলো ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ানোর সবচেয়ে দ্রুততম উপায়। মাত্র ২-৩ সপ্তাহের জন্য চিনি খাওয়া বন্ধ করলেই রিপোর্টে পার্থক্য দেখা যেতে শুরু করে।

অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন

* সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহলও ট্রাইগ্লিসারাইড হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে।

* লিভার প্রথমে অ্যালকোহল ভাঙার কাজ করে।

* চর্বি পোড়ানো বন্ধ করে দেয়।

* যদি ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে, তবে কম অ্যালকোহল পান করাও নিরাপদ নয়।

ভাজাভুজি খাবার এড়িয়ে চলুন

* সিঙ্গারা, চপ, চিপস, ফাস্ট ফুড এবং পরিশোধিত তেল এগুলো সরাসরি লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রক্তে চর্বি বাড়িয়ে দেয়।

উচ্চ-কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন

বেশি ভাত, ময়দা এবং ঘন ঘন খাবার খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে। খাবারে প্রোটিন, সবজি খান এবং কার্বোহাইড্রেট সীমিত করুন। 

ফ্রুক্টোজ এড়িয়ে চলুন

* ফ্রুক্টোজ সরাসরি ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত হয়।

* প্যাকেটজাত খাবার, কর্ন সিরাপ, ফ্লেভারযুক্ত পানীয় বাদ দিতে হবে। 

* ফল খাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু ফলের প্যাকেটজাত মিষ্টি পানীয় বা পণ্য ঠিক নয়।

রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং যোগ করুন

* শুধু হাঁটা যথেষ্ট নয়। হালকা ওজন প্রশিক্ষণ- যেমন স্কোয়াট, পুশ-আপ, ডাম্বেল ব্যায়াম এগুলো রক্ত ​​থেকে চর্বি টেনে নিয়ে পেশীতে ব্যবহার করে।

খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকুন

এটা শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি। বেশি মানসিক চাপ, ভুল খাদ্যাভ্যাস, দেরি করে ঘুমানো এসবও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে। 

এই অভ্যাসগুলো সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। তবে, জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সত্ত্বেও যদি আপনার ট্রাইগ্লিসারাইড না কমে বরং বেশি থাকে। তাহলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড কমানো অত্যন্ত জরুরি, তাই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত নয়।

 

POST A COMMENT
Advertisement