আগে এই রোগটিকে সাধারণত বয়স্কদের সমস্যা হিসেবে দেখা হলেও এখন চিত্র বদলেছে। গবেষণা বলছে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA)—এক ধরনের অটোইমিউন রোগ—আজকাল তরুণদের মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে অন্তত ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং ১৯৯০ সালের পর থেকে এই রোগের হার বেড়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি।
এই রোগ মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গোলযোগজনিত সমস্যা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুলবশত নিজের শরীরের টিস্যুগুলিকেই আক্রমণ করে, বিশেষত হাড়ের জয়েন্টগুলোকে। ফলে ব্যথা, ফোলাভাব এবং চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়। RA শুধু হাড় বা জয়েন্টে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি ত্বক, চোখ, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত সকালে উঠে জয়েন্টে প্রচণ্ড জড়তা অনুভব করেন। ব্যথা এবং ফোলাভাব ছাড়াও ক্লান্তি, হালকা জ্বর এবং ক্ষুধামান্দ্যের মতো উপসর্গ দেখা যায়। এমনকি পর্যাপ্ত বিশ্রামের পরেও শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়।
মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি, এবং হরমোনজনিত ওঠানামা এই রোগের একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তনও ঝুঁকির উপাদান।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় নেই। তবে প্রাথমিক ধাপে ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপি বা অস্ত্রোপচার জয়েন্টের ক্ষয় রোধ করতে পারে এবং জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যত আগে রোগ নির্ণয় হবে, ততটাই বেশি সুযোগ থাকবে এর অগ্রগতি থামানোর। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপান থেকে বিরত থাকাই এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।