শীত পড়তে না পড়তেই বাঙালির মন খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধে। অপেক্ষা করে কতদিনে মিষ্টি খেজুরের রস কাঠের উননে জাল দিয়ে সুস্বাদু নলেন গুড় মুখে তুলতে পারবে। নতুন ধানের খইয়ের সাথে নলেন গুড় মিশিয়ে কবে জয়নগরের মোয়া নিয়ে হাজির হবে মিষ্টির দোকানগুলো। নলেন গুড়ের মিষ্টি ও পায়েসের স্বাদ নিতে সারা বছর এই নলেন গুড়ের অপেক্ষা করে থাকে বাঙালি।
শীতে নলেন গুড় দিয়ে তৈরি বাঙালির মিষ্টি, পিঠে ,পায়েসের বিশ্ব জোড়াখ্যাতি আছে। নলেন গুড় মিষ্টি তাই সুগারের ভয়ে অনেকেই গুড় থেকে বাধ্য হয়ে দূরে থাকেন। তবে ডাক্তার- গবেষকরা কিন্তু গুড় সম্পর্কে অন্য কথা বলে থাকেন। আপাত দৃষ্টিতে গুড় শুধু রসনার তৃপ্ত করে না, গবেষকরা জানিয়েছেন গুড়ে উপকারও অনেক।
চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। গরমের সময়ে শসা ও তরমুজ যেমন শরীর শীতল রাখে, তেমনি শীতে শরীরের জন্য গুড় খুবই উপকারি। গুড় সাধারণ যে কোনো অসুখ থেকে রক্ষা করতে শরীরকে শক্তি জোগায়। আখ ও খেজুরের রস থেকে আমাদের দেশে গুড় তৈরি করা হয়। এ ছাড়া অনেক দেশে পামের রস থেকেও গুড় তৈরি করা হয়। রস সংগ্রহ করার পর তা বড় পাত্রে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা কিছুক্ষণ স্থির ভাবে রেখে দিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। এই রস আগুনের তাপে ফুটে ওঠে এবং গুড়ে পরিণত হয়। গুড় যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় তার এর উপকারিতা বেশি।
পাটালি গুড় কেবল খেতেই মজার নয় বরং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। শীতকালে পাটালি গুড় খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন সেগুলি জেনে নেওয়া যাক।
ঠান্ডা-কাশির সমস্যা দূর কর
খেজুরের গুড় শুষ্ক কাশি ও ঠাণ্ডা দূর করতে সহায়তা করে, মিউকাস পরিষ্কার করে। এটা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা লোকদের জন্য ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। কফ, গলাব্যথা, ফোলা বা খুসখুস করা দূর করতে সাহায্য করে গুড়। এ ছাড়া শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন-কফ, বা বুকে কফ জমাট বাঁধা, রক্ত প্রবাহে সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।
পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ
খেজুরের গুড়ে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের কার্যক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। যা শীতকালের জন্য বিশেষ উপকারি। এতে থাকা খনিজ উপাদান লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম রক্ত উৎপাদনে ও স্নায়ুক্রিয়া সক্রিয় রাখতে ভূমিকা রাখে।
শক্তিবর্ধক
শীতকালে ক্লান্তি দেখা দিলে বা শরীর দুর্বল লাগলে গুড় খাওয়া উপকারি। এর কার্বোহাইড্রেইট যৌগ যা সাধারণ চিনির তুলনায় খাবার দ্রুত হজম হতে সহায়তা করে। নিয়মিত এক টুকরা গুড় খাওয়া শক্তি বাড়ায় ও অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে।
মাসিকের ব্যথা কমায়
খেজুরের গুড় প্রাকৃতিক উপায়ে মাসিকজনিত ব্যথা কমায়। এটা দেহে এন্ডোরফিন্স নিঃসরণ করে যা শরীর ভালো রাখে ও পেটের ব্যথা কমায়।
হজম শক্তি বাড়ায়
শীতকালীন অসুস্থতা ও মসলাদার খাবারের কারণে নানা রকমের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। খেজুরের গুড় হজমে সাহায্য করে ও পেটের ব্যথা কমায়। এটা হজম রস সক্রিয় করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গুড় শরীর থেকে অবাঞ্ছিত উপাদান দূর করে পাকস্থলী, অন্ত্র, ফুসফুস ও খাদ্যনালি সুস্থ রাখে।
গাঁটের ব্যথা কমায়
খেজুরের গুড় হাড় দৃঢ় করতে সহায়তা করে ও হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা কমায়। এটা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ তাই হাড় শক্ত ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।