'বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা....."। হৃদয়ে দোলা দেওয়ার ব্যাপারটি তো ঠিক আছে। এটা প্রাকৃতিক নিয়মেই জীবনচক্রে ঘটে থাকে। বারবার। কিন্তু গভীরভাবে হৃদয় কাউকে দিয়ে দিলে তা যদি ভেঙে যায়, তাহলে কিন্তু কপালে দুঃখ আছে।
দুঃখ এমন হতে পারে, যাতে আপনি নয়, আপনার পরিবারের লোকেরা ভুক্তভোগী হতে পারেন। আপনি দিলেন হৃদয়, ভাঙলো আপনার হৃদয়, আর দুঃখ পাবে আপনার বাড়ির লোক ! এ কেমন কথা।
কথা সত্য়ি। কারণ আপনার হৃদয় ভাঙার জেরে ঘটে যেতে পারে মৃত্যু। সাহিত্য নয়, এ কথা বলছে বিজ্ঞান। হৃদয় ভাঙলে তা যদি আপনার ভেতরটাকে চুরচুর করে দেয়, তাহলে আপনাকে ভিতর থেকে আক্রান্ত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা একে (Broken Heart Syndrome) ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম বলছেন। প্রেম ঘটিত কারণে হৃদয় ভাঙার মতোই আরও কতগুলি কারণ তাঁরা সামনে এনেছেন। যেগুলির কারণেও হৃদয়ে এই সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।
কাউকে হারানোর ভয়, কোনও দুশ্চিন্তা মনের গভীরে গেড়ে বসা, কোনও আচমকা আঘাতও এই ক্যাটেগরিতে পড়বে। ফলে হৃদপিণ্ডে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে। যা হৃদযন্ত্রে বৈকল্য আনতে পারে। যার সুদূরপ্রসারী ফল হল মৃত্যু।
আচমকা অতিরিক্ত বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি যদি হৃদপিণ্ডে স্পন্দন যদি হয়, তাহলে হরমোন্যাল গ্ল্যান্ডসে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় যা সমস্যার সৃষ্টি করে। যা স্ট্রোকের পাঁচগুণ বেশি এবং মৃত্যুর দ্বিগুণ সুযোগ তৈরি হয়ে যায়।
একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে ইউরোপে ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ পর্যন্ত হৃদয়ের রোগী পাওয়া যাবে। ইউরোপে প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লক্ষ রোগী পর্যন্ত গড়ে হৃদয়ের চিকিৎসা করান। যেখানে ২০১০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫২ লক্ষ রোগী ছিলেন।
এই রোগ কখনও আচমকা বেড়ে যায়। আবার কখনও ধীরে ধীরে শরীরের ভিতরের প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দেয়। পাশাপাশি এই রোগের আগে থেকে কোনও পূর্বাভাস থাকে না।
আসলে (Atrial Fibrillation - AF) ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম (Broken Heart Syndrome)-এর সোজা সম্বন্ধ রয়েছে। কোনও দুশ্চিন্তা তীব্র হলে আর্টারি বা ধমনী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এরপর ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অথবা আরও দু-তিন বছর পর মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বেড়ে যায়। এই ধরণের ঘটনায় মানুষ কোনও প্রতিরোধ করতে পারে না।
পরিবারের কোনও অল্পবয়সি সদস্যের মৃত্য়ু হলে হৃদয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়। তা বেশি বয়সী সদস্য মারা গেলে ততটা হয় না। কারণ বেশি বয়সী সদস্যের মৃত্যু অনেক বেশি অভিপ্রেত থাকে।