করোনার ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভীত সকলে। নতুন এই স্টেন আরও বেশি ক্ষতিকারক বলে জানা যাচ্ছে। সামান্যতম অবহেলাও শরীরে করোনা ভাইরাসকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যথেষ্ট। বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি সঠিক ডায়েটের দিকেও নজর দিতে হবে। এই সময়ে ভাল পুষ্টি এবং হাইড্রেশন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation/ WHO) জানিয়েছে করোনার হাত থেকে বাঁচতে কী ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত। দেখে নিন এক নজরে।
করোনার সময়কালে উপযুক্ত ডায়েট
আপনার ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের টাটকা ফল এবং অপরিশোধিত খাবার রাখুন। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
প্রচুর পরিমাণে ফল, শাক-সবজি, ডাল,বাদাম, টাটাকা ভুট্টা, বাজরা, ওটস, গম, ব্রাউন রাইস, মাটির নীচে জন্মায় এরকম সবজি- আলু, রাঙা আলু ইত্যাদি খান। রোজকার ডায়েটে মাংস, মাছ, ডিম এবং দুধ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন। তবে কোনও খাবার অন্য কোনও রোগের জন্য আপনার বারণ থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন আগে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ২ কাপ ফল, ২.৫ কাপ শাকসবজি, ১৮০ গ্রাম শস্য এবং ১৬০ গ্রাম মাংস এবং শুঁটি জাতীয় সবজি খান। এই সময়ে সপ্তাহে ১-২ বার রেড মিট এবং ২-৩ বার মুরগির মাংস খেতে পারেন। তবে অবশ্যই শরীরের অন্যান্য সমস্যার কথা মাথায় রেখে। কাঁচা শাকসবজি এবং তাজা ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অপ্রয়োজনীয়ভাবে রান্নার সময়ে শাক সবজি, অতিরিক্ত সিদ্ধ করবেন না। অন্যথা এর পুষ্টিগুলি শেষ হয়ে যাবে। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলে, দেখে নিন সেখানে খুব বেশি নুন এবং চিনি যেন না থাকে।
পর্যাপ্ত জল পান করুন
জল শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে পুষ্টি সরবরাহ করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে দেয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন। জল ছাড়াও, আপনি ফল বা সবজির রস এবং লেবুর সরবত পান করতে পারেন। তবে কোল্ড ড্রিঙ্কস, সোডা এবং কফির পরিমাণ সেই সঙ্গে হ্রাস করুন।
স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাবেন না
ফ্যাটযুক্ত মাছ, মাখন, নারকেল তেল, ক্রিম, পনির এবং ঘি-তে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। কাজেই এই ধরনের খাবারের পরিবর্তে ডায়েটে রাখুন অ্যাভোকাডো, বাদাম, অলিভ ওয়েল, সোয়া, সান ফ্লাওয়ার এবং কর্ন অয়েল। যতটা সম্ভব ফ্যাট কম আছে এরকম মাংস এবং মাছ খান। প্রক্রিয়াজাত মাংস একদম খাবেন না।
বাইরের খাওয়া এড়িয়ে চলুন
করোনা একে অপরের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই সময়ে বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে বাড়ির খাবার খান। বর্তমানে ভারতের অনেক রাজ্যে, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ বাইরের খাবার খেতে চাইলে, তাঁকে বাড়িতে নিয়ে সেটি খেতে হয়। আপনি এখন থেকেই সেটা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
এই জিনিসগুলি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
ফ্যাট, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চিনি, চর্বি এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সারা দিন ১ চা চামচের বেশি নুন খাবেন না। অন্য রোগ করোনা ভাইরাসকে অনেক দ্রুত আমন্ত্রণ জানায়।
যতটা সম্ভব ট্রান্স ফ্যাট থেকে দূরে থাকুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, ভাজাভুজি, হিমায়িত পিৎজ্জা, কুকিজ এবং ক্রিমে প্রচুর ট্রান্স ফ্যাট থাকে। শরীরের অন্য কোনও রোগ করোনা ভাইরাসকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখুন।
পুষ্টিকর আছে এরকম খাবার, শরীরে যথাযথ হাইড্রেশন যোগানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে। তবে এটি কোনও জাদু নয়। যে সমস্ত ব্যক্তিরা অসুস্থ বা যাদের করোনা রয়েছে, তাঁদেরও নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া দরকার। আপনি যদি মানসিকভাবে সুস্থ বোধ না করেন, তবে অবশ্যই মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।