আপেলের অনেক গুণ, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। নিয়মিত আপেল খেলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, এন এ্যাপেল আ ডে কিপ দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে। অর্থ, নিয়মিত আপেল খেলে চিকিত্সকের প্রয়োজন হয় না।
পুষ্টিগুণে আপেল খাবারের মধ্যে বেশ উচ্চস্থানে থাকলেও এই আপেলের বীজের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক বিষ। যে কারণে আপেলের কাণ্ড এবং বীজ ফেলে খাওয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপেলের বীজে অ্যামিগাডলিন থাকে। যা আমাদের শরীরে উৎসেচকের সংস্পর্শে এসে সায়ানাইড উৎপন্ন করে। শরীরে চিনির সঙ্গে সায়ানাইড মিশে হাইড্রোজেন সায়ানাইডে পরিণত হয়। যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আপেলের বীজে ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রেই প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপেলের বীজে রয়েছে সামান্য মাত্রায় প্রাণঘাতী সায়ানাইড। আপেলের সাথে বীজ গিলে ফেললে এই বীজ পরিপাকনালী হয়ে মলদ্বার দিয়ে আস্তই বেরিয়ে যায়। ফলে ভয়ের কোনো কারণ থাকে না।তখন এই বীজের কঠিন আবরণ ভেদ করে সায়ানাইড বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারায় বিষক্রিয়া ঘটে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে আপেলের বীজে কামড় পড়লে অথবা বীজ কামড়ে খেলে।
তবে একটি মাত্র দানা ভুল করে চিবিয়ে খেয়ে ফেললেও বড়দের জন্য তেমন ভয়ের কিছু নেই। বড়দের শরীর তা বিষমুক্ত করে বের করে দেবে। তবে এমনটি করাও বড়দের ঠিক হবে না। গবেষনায় আরও জানা গেছে, প্রতি কিলোগ্রাম শরীরের ওজনে এক মিলিগ্রাম সায়ানাইড ক্ষতিকারক। প্রতিটি আপেলদানায় থাকে গড়ে .৪৯ মিলিগ্রাম সায়ানোজেনিক যৌগ। একটি আপেলে আট থেকে দশটির মতো বীজ থাকে। অর্থাৎ গোটা আপেলে মোট সায়ানাইডের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.৯২ মিলিগ্রাম। সেই হিসাবে ৬৫ কেজি ওজনের কোনো ব্যক্তি কমপক্ষে ১৩২টি বীজ চিবিয়ে খেলে, সেটা হবে তার জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ। এ জন্য লাগবে ১৮ থেকে ২০টি আপেল।
তবে শিশুরা একসাথে চার-পাঁচটি আপেলের দানা চিবিয়ে খেয়ে ফেললে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। শিশুদের ওজন কম থাকায় সায়ানাইডের বিষে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে শিশুটির। তাই অবশ্যই বীজ বা দানা ফেলে দিয়ে শিশুদের আপেল খেতে দেওয়া উচিত।
সায়ানাইড অন্যতম কুখ্যাত বিষ। সারা বিশ্বে রাসায়নিকের সাহায্যে আত্মহত্যা ও খুনের ঘটনায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে সায়ানাইড। এই রাসায়নিক মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ রুখে দিতে পারে। আপেল ছাড়াও এপ্রিকট, চেরি, প্লাম, পিচের মতো ফলের বীজে সায়ানাইড থাকে। এই সব বীজের শক্ত খোলসের মধ্যে অ্যামিগাডলিন থাকে।
২০০টা আপেলের বীজ বেটে খেলে (১ কাপ) খেলে তা শরীরের পক্ষে ভয়াবহ হতে পারে। সায়ানাইড আমাদের হার্ট ও মস্তিষ্ককে অচল করে দেয়। কোমায় চলে যাওয়া, এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। বেঁচে থাকলেও হার্ট ও মস্তিষ্ক কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণভাবে সায়ানাইড শরীরে গেলে হার্টঅ্যাটাক, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। অল্প পরিমাণ পেটে গেলে মাথা ধরা, বমি, পেট ব্যথা, দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।