তিনচুলে নামের পিছনে এখানকার মূল রহস্য। তিনটে ছোট পাহাড় রয়েছে এখানে। দূর থেকে যার শোভা চুল্লি বা ওভেনের মতোই মনে হয়। তাই স্থানীয়রা এই গ্রামের নাম রাখেন তিনচুলে। বা অন্য কেউও রাখতে পারে। সেসব এখন আর কারও মনে নেই। আপাদমস্তক জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রাম। যেন সভ্য জগতের এখানে প্রবেশ নিষেধ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রাম রয়েছে কালিম্পংয়ের দিকে চেয়ে। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তো দাঁড়িয়েই রয়েছে এই গ্রামগুলিকে দেখাশোনার জন্য। এই গ্রামে যদি আপনি একবার গিয়ে পৌঁছান, তাহলে আপনার চোখে শুধু ধরা দেবে সবুজ প্রান্তর। কারণ ছোট ছোট তিনটি পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রাম। আর তিনটি পাহাড় নাকি দেখতে অনেকটা চুল্লির মত, আর সেই কারণেই এই গ্রামের নাম তিনচুলে।
কী আছে দেখার মতো?
তিনচুলের মূল আকর্ষণ কমলা অর্কিডের বন। রয়েছে এক সুদৃশ্য মনেস্ট্রি। যেখানে এক লামা ১৭ বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন বলে কথিত রয়েছে। খুব কম দূরত্বের মধ্যে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসা ছ'টি চা বাগান এলাকার সৌন্দর্য্যের মুকুটে পালক যোগ করেছে।
তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় দেখার মজাই আলাদা। গুমবাদারা ও লাভার্স ভিউ পয়েন্ট থেকে পাহাড়, নদী, বন ও মেঘের প্রেমালাপ কানে পৌঁছলে মনে হবে তিষ্ঠ ক্ষণকাল। পাখির কলতানে ঘুম ভাঙা সকালে পাহাড়িয়া মানুষের আতিথেয়তা এ স্থানের বাড়তি পাওনা।
কখন যাবেন?
অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মধ্যে তিনচুলে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময়। কারণ এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে। পাহাড় এবং উপত্যকার শোভা আরও স্পষ্ট হয় এই সময়। থাকবার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি হোম স্টে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্য়ে গেলে তুষারপাতও দেখা মিললেও মিলতে পারে। যদিও তা বিরল।
কী কী উপভোগ করতে পারবেন?
আকাশের বুক চিরে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এখানকার থেকে ভাল বোধহয় আর কোথাও দেখা যায় না৷ পাহাড়ের গায়েই রয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ৷ যাতে বসে সূর্যাস্তের রাঙা আকাশে ছেয়ে যাবে ডুবন্ত সূর্যের লালিমা৷ সামনে বয়ে চলেছে সুন্দরী তিস্তা৷ যার পাশে রঙবেরঙের নুড়িগুলি বলবে ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রামের ইতিকথা৷ শীতের সকালে গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির উঠোনে হাসিমুখে পর্যটকদের স্বাগত জানায় চেনা-অচেনা অর্কিডরা৷
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন ধরে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামতে হবে৷ সেখান থেকে গাড়ি বুক করেই যেতে হবে তিনচুলে-তে৷ শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম৷