করোনার সংক্রমণ ক্রমশ আরও বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। করোনা রোগীদের মধ্যে নতুন মারণ রোগ মিউকরমাইকোসিস-এর প্রকোপ বাড়ছে। দিল্লি, মুম্বই এবং গুজরাত মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন এই রোগে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে গুজরাতেই এখনও পর্যন্ত ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের সিনিয়র ইএনটি সার্জেন মনীষ মুঞ্জাল বলেন, 'কোভিডের ফলে এই মারণ ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গত ২ দিনে ৬ জন করোনা রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরও এই রোগে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, কারও কারও ক্ষেত্রে নাক এবং চোয়ালের হাড় বাদ দিতে হয়েছে।'
মিউকরমাইকোসিস এতটাই ভয়ংকর যে এই রোগে আক্রান্ত হলে সোজা ICU-তে ভরতি হওযা ছাড়া গতি নেই। যদি করোনা রোগী এতে আক্রান্ত হন সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না করালে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। জেনে নিন মিউকরমাইকোসিস আসলে কী এবং করোনা রোগীদের এর ফলে কেন বেশি ভয়।
মিউকরমাইকোসিস কী?
মিউকরমাইকোসিস কোনও নতুন রোগ নয়। আগে এটি জাইগোমাইকোসিস নামে পরিচিত ছিল। মিউকরমাইসিটস নামের ছত্রাক থেকে এই রোগ ছড়ায়। মূলত নাক ও চোখের মাধ্যমেই সংক্রমণ শরীরে প্রবেশ করে। শুরুতেই ধরা পড়লে এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে অবহেলা করলে এই রোগ প্রাণঘাতী আকার ধারণ করে। কারও ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। কারও মুখের নানা অংশের হাড় গলে যায়।
মিউকরমাইকোসিস লক্ষণ কী কী?
ব্রেন মিউকরমাইকোসিস এর প্রধান লক্ষণগুলি হল মুখের কোনও এক দিক হঠাৎ ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, সাইনাসের সমস্যা, নাকের উপরাংশে কালো ঘা যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর থাকতে পারে। এই সংক্রমণ ফুসফুসে হলে কাশি, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা এবং বুকে ব্যথার মতো লক্ষ্মণ থাকে। ত্বকে সংক্রমণ হলে ফোঁড়া এবং র্যাশ বার হতে পারে। তার সঙ্গে ফোঁড়ার অংশটি কালো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও চোখে যন্ত্রণা, ঝাপসা দেখা, পেটে ব্যথা, বমি ভাব থাকতে পারে।
করোনা রোগীদের ভয় বেশি
মিউকরমাইকোসিস তাঁদেরই বেশি আক্রমণ করে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। করোনা সংক্রমণের সময় বা ঠিক হওয়ার ঠিক পরেই রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সে কারণে সহজেই এই রোগের শিকার হতে পারেন তাঁরা। বিশেষত যাঁদের জায়াবিটিস রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে এটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অজয় স্বরূপ জানিয়েছেন, কোভিড -১৯ এর চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহারও এই ঘটনাগুলি বাড়িয়ে তুলছে। একই সঙ্গে, ডায়াবিটিসযুক্ত করোনার রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে।