আমেরিকার এক অধ্যাপক দাবি করেছেন যে ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং অনেকে বন্দ্যাত্বের শিকার হতে পারেন। শানা সোভেন নিউ ইয়র্ক সিটির পরিবেশগত মেডিসিনের অধ্যাপক। তিনি ২০১৭সালে তাঁর গবেষণায় বলেছিলেন যে গত ৪০ বছরে পশ্চিমা দেশগুলিতে বসবাসকারী মানুষের শুক্রাণুর হার কীভাবে অর্ধেক হয়ে গেছে।
দ্য গার্ডিয়ান ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোভেন বলেন যে প্লাস্টিক থাকা রাসায়নিকের কারণে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা ব্যাপকভাবেক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লোকেরা এখন বুঝতে পারছেন যা মানব সমাজ প্রজনন স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। অনেক লোক অবশ্য বিশ্বাস করেন যে বর্তমান লাইফস্টাইল এবং ফুড হেভিট ও অনেক বেশি বয়সে বিয়ে করার মতো কারণগুলির জন্য এটা হচ্ছে।
সোভেন বলেছিলেন যে, আমি বলছি না যে এটি কারণ হতে পারে নায, তবে আমি এটিও বলতে চাই যে প্লাস্টিকে থাকা রাসায়নিকগুলিও মানুষের প্রজনন ক্ষমতাকে শিথিল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণস্বরূপ, Phthalates নামের একটি রাসায়নিকের কথা বলেন তিনি, যা প্লাস্টিককে নরম এবং মোলায়েম করে তোলে, এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক।
তিনি বলেছিলেন যে এই রাসায়নিকটি বেশিরভাগ মানুষের শরীরে পৌঁছে গিয়েছে, কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে নরম প্লাস্টিক ব্যবহার করি। এগুলি মানুষের টেস্টোস্টেরন হ্রাস এবং শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করে। এই রাসায়নিকটি পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও বিপজ্জনক, কারণ এটি গর্ভপাত, মিস ক্যারেজ , প্রি ম্যাচিওর বার্থের মত অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে।
এর বাইরে Bisphenol A নামের একটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা প্লাস্টিকগুলিকে শক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যাশমেমো তৈরি এবং এবং ক্যান ও ফুড কন্টেনারে পাওয়া যায়। এটি মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতার উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই রাসায়নিকটি পুরুষদের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক।
সোভেন আরও বলেছিলেন যে কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই রাসায়নিকের প্রভাবের পরে মানুষের শুক্রাণুর গুণগতমান হ্রাস পেতে পারে এবং ইরেক্টাইল ডিসফ্লক্শনের মত সাধারণ যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলি ছাড়াও কিছু পাস্টিসাইডস অর্থাৎ atrazine-ও মানুষের যৌন সমস্যা বাড়াতে পারে।
এর বিপদের বিষয়ে সোভেন বলেছিলেন, আমরা যদি ২০১৭ এর গবেষণাটি অনুসরণ করি তবে ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের শুক্রাণুর সংখ্যা এতটাই হ্রাস পেতে পারে যে মানুষ প্রায় নপুংসক হয়ে উঠতে পারে। এটি সত্য যে আমরা ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ জাতীয় দাবি করছি, তবে এটি অস্বীকার করা যায় না যে এই জাতীয় পরিস্থিতির কারণে অনেক দম্পতির দু'জনেই সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন।
এই সমস্যার চিকিত্সা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সোভেন বলেছিলেন, যাঁরা সন্তানের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জানা উচিত যে তারা বাড়িতে যে জিনিস আনছেন তাতে রাসায়নিকগ থাকতে পারে। তাই আনপ্রসেসড খাবারগুলি এবার থেকে বেশি করে খেতে হবে। বাড়িতে শাকসবজি রান্না করে খাওয়া সবথেকে ভাল, কারণ এতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
এগুলি ছাড়া, রান্না করার সময় প্লাস্টিকের প্রলেপ এবং মাইক্রোওয়েভের জন্য টেফলনের মতো পদার্থ ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন। ঘরের সাধারণ জিনিসগুলি ব্যবহার করুন এবং সুগন্ধযুক্ত ফ্যান্সি জিনিসগুলি এড়িয়ে চলুন কারণ এই জিনিসগুলিতে প্রচুর পরিমাণে phthalates থাকতে পারে। এ ছাড়া Environmental working group থেকেও নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।