প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। ২০২২ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম 'Our Planet, Our Health'। স্বাস্থ্য প্রাথমিকভাবে ৬ প্রকার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগগত স্বাস্থ্য, পরিবেশগত এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য। কারও এই ৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে তাকে সুস্থ বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতিটি মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষকে অনেক উপায়ে সাহায্য করে, কারণ সুস্থ লোকেরা বেশি দিন বাঁচে এবং আরও বেশি উৎপাদনশীল হয়।
প্রতিটি স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। তাই আমরা এমন কিছু লক্ষণের কথা বলছি, যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে এবং অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস: আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির চিফ ক্যান্সার কন্ট্রোল অফিসার, এমডি রিচার্ড ওয়েন্ডারের মতে, আপনি যদি কোনও ডায়েট বা ব্যায়াম পরিবর্তন না করে ১০ পাউন্ডের বেশি হারান, তবে এটি পরীক্ষা করা দরকার। হঠাৎ ওজন কমে গেলে তা অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
দাঁতের ক্ষতি: ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা স্কুলের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (জিআই) বিশেষজ্ঞ, এমডি ইভান ডেলনের মতে, যারা ঘন ঘন তাদের দাঁত ভেঙে ফেলে তাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে। এতে থাকা অ্যাসিডের কারণে দাঁত ভাঙতে শুরু করে।
নাক ডাকার সমস্যা: অনেকেরই জোরে নাক ডাকার অভ্যাস আছে। কখনও কখনও নাক ডাকার কারণে ঘুমহীনতা হতে পারে এবং এটি বিব্রতকরও হতে পারে। কিন্তু নাক ডাকা এটাও একটা লক্ষণ হতে পারে যে আপনি যতটা সুস্থ ভাবছেন ততটা সুস্থ নন। নাক ডাকা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, স্লিপ অ্যাপনিয়া, অতিরিক্ত ওজন, হৃদরোগ, GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ), এবং স্ট্রোক। তাই নাক ডাকার অভ্যাস সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
ত্বকে দাগ: ত্বকে দাগ, ছোপ থাকাও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কারো যদি ব্রণ হয়, চুলকানি হয় তাহলে শরীরে কিছু মারাত্মক রোগও হতে পারে। যেমন অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কম ঘুম, খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে কপালে ব্রণ হয়। অন্যদিকে, চিবুকের নীচে ব্রণ পেট সংক্রান্ত সমস্যার কারণ। তাই এই দিকেও মনোযোগ দিন।
চোখের সাদা অংশের রং পরিবর্তন: বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ সুস্থ থাকলে তার চোখ সাদা দেখায়। কিন্তু আপনার চোখ যদি হলুদ দেখায় তবে তা পিত্তথলি, যকৃত, অগ্ন্যাশয় বা পিত্তনালীতে সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। একই সময়ে, লাল চোখও খারাপ স্বাস্থ্যের লক্ষণ।
নখের রং পরিবর্তন: নখ দেখে আপনার স্বাস্থ্য জানতে পারবেন বিশেষজ্ঞরা। যদি আপনার হাত ও পায়ের নখের আকৃতি, গঠন এবং রঙ স্বাভাবিক না হয় তাহলে তার মানে আপনি সুস্থ নন। কখনও কখনও ধূমপান এবং নির্দিষ্ট নেইলপলিশের রংও নখের হলুদ হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নখের হলুদ রং খারাপ রক্ত সঞ্চালন এবং তরলের অভাবের কারণে।
বার বার গ্যাস, অম্বলের সমস্যা: কারো পেটে যদি বারবার গ্যাস তৈরি হয়, তবে তার হজম ঠিক না হওয়ার কারণে। অন্যদিকে, যদি কেউ দিনে ১০-২০ বার বাতকর্ম করেন, তবে তাকে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। এটা সম্ভব যে আপনি ডায়েটে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করছেন, যার ফলে গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। আপনারও যদি এই সমস্যা থাকে, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের কাছে যান।
সব সময় ক্লান্ত: শরীরে সবসময় ক্লান্ত থাকার ফলেও শরীরে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেউ যদি বেশি ক্যাফেইন খান বা ভুল জীবনধারা অনুসরণ করেন, তাহলে তিনি সবসময় ক্লান্ত থাকেন। কিন্তু অন্যদিকে, কোনো কারণ ছাড়াই যদি সবসময় ক্লান্তি থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন। হতে পারে, আপনি এমন কিছু লক্ষণ দেখছেন, যার কারণে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এই সমস্যাটি সময়মতো সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটি ভবিষ্যতে সমস্যা না হয়।