৪০-এর নিখিল ভালবেসে বিয়ে করলেন ৬০ বছরের গীতাকেভালোবাসার কোনও বয়স নেই, এর জন্য সঠিক সময় বা নিখুঁত রুপেরও প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসা হলো হৃদয় থেকে হৃদয়ের সংযোগ যা যেকোনও সময়, যে কারও সঙ্গেও ঘটতে পারে। আমরা কয়েক দশক ধরে বলিউডের ছবিতে এমন গল্প শুনে আসছি। কিছু মানুষ ভালোবাসার এই তত্ত্বগুলিকে কেবল চলচ্চিত্রের রঙিন জগতের অংশ বলে মনে করে, কিন্তু এমন অনেক গল্প আছে যা আমাদের সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা এই কথাগুলি বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। এরকমই একটি গল্প হল ৬০ বছর বয়সী গীতা এবং ৪০ বছর বয়সী নিখিলের, যারা বয়সের বাধা ভেঙে প্রেমে পড়েছিলেন এবং সমাজের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ এবং তিরস্কারের মুখোমুখি হওয়ার পরেও বিয়ে করেছিলেন। এটি কেবল দুজন মানুষের প্রেমের গল্প নয়, বরং সাহস, বিশ্বাস এবং সামাজিক রীতিনীতির উর্দ্ধে চলে যাওয়ার গল্প।
গীতা তাঁর জীবনে এমন একটি সময় পার করেছিলেন যেখানে আবার কাউকে বিশ্বাস করা সবচেয়ে কঠিন ছিল। প্রশ্ন ছিল, ভয় ছিল এবং অতীতের স্মৃতি ছিল। এদিকে, নিখিল বয়সের এই পার্থক্য এবং অন্যদের কথা উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি কেবল বিশ্বাস করেছিলেন হৃদয়ের মিল যদি ঘটে, তবে একসঙ্গে থাকাই সেরা সিদ্ধান্ত।
সম্পর্ক নিয়ে যখন অনেক প্রশ্ন
' ৪০ বছরের ছেলে আর ৬০ বছরের বউ?'
‘তাঁকে বৌদি বলবে নাকি মাসি?’ এবং ‘আমার ভাই কি একজন বৃদ্ধা মহিলাকে বিয়ে করছে?’
যখন লোকেরা গীতা এবং নিখিলের সম্পর্কের কথা জানতে পারল, তখন নিখিল এরকম কটূক্তি এবং প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল। নিখিলকে জিজ্ঞাসা করা এই প্রশ্নগুলি দেখায় যে সমাজ এই সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই কীভাবে মূল্যায়ন করেছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, গীতা নিজেও কিছু সময়ের জন্য বিশ্বাস করে নেন যে নিখিল তার সমবয়সী কোনও মহিলার সঙ্গে আরও সুখী হবে। এমনকি তিনি নিখিলের মায়ের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন তাঁর জন্য একজন 'উপযুক্ত' সঙ্গী খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য।
কিন্তু নিখিল পিছপা হননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে তিনি গীতাকে ছেড়ে যাবেন না। তাঁর বিশ্বাস এবং ভালোবাসার কারণেই গীতা বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর নিজের সুখের অধিকার তার বয়স দ্বারা নির্ধারিত হয় না।
গীতার আগেও বিয়ে হয়েছিল
নিখিলের আগে, গীতার জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। ২৮ বছরের তাঁর বিবাহিত জীবন। বাইরের জগতে, তার পরিবার নিখুঁত ছিল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সবকিছু বদলে যাচ্ছিল। তিনি তাঁর স্বামীর থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। স্বামী মাসের পর মাস বাড়িতে আসতেন না এবং রাগ দেখাতেন। একদিন, যখন গীতার স্বামী অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে আসেন, তখন বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্রও নিয়ে আসেন, যা গীতাকে হতবাক করে দেয়। গীতা সম্পর্ক বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু কিছুই কাজ করেনি। বিবাহবিচ্ছেদের মাত্র এক মাস পরে, তাঁর স্বামী একজন কম বয়সী মহিলার সঙ্গে ছবি পাঠিয়ে নিজের বিয়ের কথা বলে। তা সত্ত্বেও, গীতা আশা ছাড়েননি। তিনি পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামী পুনরায় বিয়ে করেন এবং এমনকি নিজের ছেলেকেও মায়ের থেকে দূর করে দেন। এই যন্ত্রণা গীতাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিল।
গীতার জীবন বদলে দেয়
এত কিছুর পর, জীবন গীতাকে আরেকটি সুযোগ দেয় যখন সে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে কুকুরের টিকাদান অভিযানে যায়। সেখানেই তাঁর সঙ্গে নিখিলের দেখা হয়। নিখিল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাঁকে ইতিমধ্যেই চিনত। তাঁরা কথা বলতে শুরু করে, এবং প্রাণিদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা আরও কাছে নিয়ে আসে। তাঁদের সম্পর্কটি ধীরে ধীরে বিশ্বাসের উপর এগিয়ে চলছিল। তিন বছরের মধ্যে নিখিল গীতার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হয়ে ওঠে।
তাঁরা সবার বিপরীতে গিয়ে অপরকে বেছে নেন
১১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে, গীতা এবং নিখিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পথটি সহজ ছিল না। পরিবার, সমাজ এবং গীতার ভয় তাঁদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু নিখিলের ধৈর্য, দৃঢ় সংকল্প এবং নিঃশর্ত ভালোবাসা ধীরে ধীরে গীতাকে আশ্বস্ত করে। অবশেষে, উভয় পরিবারই তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেয়।
নিখুঁত নয়, কিন্তু সত্যিকারের সম্পর্ক
গীতা এবং নিখিল স্বীকার করেন যে তারা সবসময় সবকিছুতেই একমত হন না। তাদের মতামত আলাদা, তাদের অভিজ্ঞতা আলাদা, কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, প্রতিটি তর্কের মধ্যেই ভালোবাসা রয়েছে। কথা বলা, শোনা এবং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা তাঁদের সম্পর্কের আসল শক্তি। বয়সের ব্যবধান এবং সামাজিক উপহাস সত্ত্বেও, গীতা এবং নিখিল প্রমাণ করেছেন যে সত্যিকারের ভালোবাসা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে। যখন উদ্দেশ্য দৃঢ় হয়, তখন বন্ধ দরজাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। এই গল্পটি তাদের সকলের জন্য আশার আলো যারা বিশ্বাস করেন যে ভালোবাসা কেবল তরুণদের জন্য নয়, বরং যারা আবার নতুন জীবন শুরু করতে চায় তাদের জন্যও।