কোনও কোনও স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকাকে একই রকম দেখতে লাগে। ঠিক যেন ভাই-বোন! অনেকেই হয় তো বিষয়টি খেয়াল করেছেন। বহুক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও কাপলের চেহারা, গায়ের রঙ, উচ্চতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকটা মিল থাকে। দু'জনেরই চোখে চশমা, দু'জনেই একই স্টাইলের পোশাক পরেন(ওয়েস্টার্ন বা ভারতীয়) এমন বহু উদাহরণ আছে। তবে বিষয়টি আপনার একার মনে হয়নি। এমন কিন্তু বহু কাপলেরই হয়।
এর পেছনে কি কোনও কারণ আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য, আমাদের কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি বিবেচনা করতে হবে।
১) স্বাভাবিক প্রবৃত্তি
আমরা সাধারণত নিজেদের প্রতিচ্ছবিটাই খুঁজতে থাকি। এটা আমাদের মনের অভ্যন্তরে চলতে থাকে। যে ব্যক্তি খেতে ভালভাসেন, তিনি এমন কাউকে চান, যিনি তাঁর মতোই খাদ্যরসিক হবেন। আবার খুব জিম-ফ্রিক কেউ-ও এমন কারও প্রেমে পড়েন, যাঁর সঙ্গে একসঙ্গে ওয়ার্ক আউট করা যাবে। ফলে এদিক দিয়ে অনেক যুগলেরই মিল থাকে।
২) মা-বাবার প্রভাব
অনেক মেয়েকেই বলতে শোনা যায়, 'বাবার মতো' কাউকে চাই। অর্থাৎ, ছোট থেকে ভালবাসা, ভরসার মানুষ হিসাবে যেভাবে বাবাকে ভালবেসেছেন, সেভাবেই কাউকে চান। তাই তাঁদের অজান্তেই তাঁরা অনেকসময়ে তাঁদের বাবার মতো দেখতেই কোনও ছেলের প্রেমে পড়েন। আবার অনেক ছেলে মায়ের মতো দেখতে কাউকে সৌন্দর্য্যের পরাকাষ্ঠা মানেন। তাতে কোনও দোষ নেই। কিন্তু বিষয়টা হল, মা-বাবার মতোই সন্তানকে দেখতে হয়। আর তাঁদের মতোই দেখতে কাউকে বেছে নেওয়া মানে সেই সঙ্গীকেও মা-বাবার মতো, অর্থাৎ তাঁর মতো দেখতে হবে।
৩) মুখের অভিব্যক্তি অনুকরণ
মানুষ স্বভাবতই অন্যের মুখের অভিব্যক্তি অনুকরণ করতে থাকে। একসাথে অনেক সময় কাটানোর ফলে, স্বামী-স্ত্রী/প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের মুখের অভিব্যক্তি, হাসি, ভ্রু কুঁচকানো, এমনকি চোখের পলকানোর ধরণও অনুকরণ করতে শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদী এই প্রক্রিয়া চেহারার মিল তৈরি করতে পারে।
৪) একই পরিবেশ ও জীবনধারা
একই ছাদের নিচে বসবাস, একই খাবার খাওয়া, একই রুটিন মেনে চলা - এই সবকিছুর ফলে শারীরিক গঠন ও চেহারায় মিল দেখা দিতে পারে। একই ধরণের পরিবেশে বসবাসের ফলে ত্বকের ধরন, চুলের রঙ, এমনকি ওজনও একই রকম হতে পারে।
৫) 'কমফোর্ট জোন'-এর প্রভাব:
যখন আমরা কারো সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে থাকি, তখন আমরা তাদের সামনে আমাদের আসল রূপ প্রকাশ করতে শুরু করি। 'কমফোর্ট জোন'-এ থাকার ফলে, আমরা মেকআপ, পোশাক, এমনকি চুলের স্টাইলের ব্যাপারেও কম সচেতন হয়ে পড়তে পারি। এর ফলে, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে থাকা মানুষদের প্রাকৃতিক চেহারা বেরিয়ে আসে, যা 'ভাই-বোনের মতো' মিল তৈরি করতে পারে।
৬) জিনগত মিল
কিছু ক্ষেত্রে, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে থাকা মানুষদের মধ্যে জিনগত মিল থাকতে পারে। বিশেষ করে, যারা একই এলাকা বা সম্প্রদায় থেকে আসে তাদের মধ্যে জিনগত মিলের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই জিনগত মিল চেহারার মিল তৈরি করতে পারে।
৭) মনস্তাত্ত্বিক দিক
মানুষ যখন দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে থাকে, তখন তারা একে অপরের সাথে আবেগগতভাবে ও মানসিকভাবে একীভূত হতে শুরু করে। এই মানসিক একীভূতের প্রভাব চেহারার উপরেও পড়তে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে থাকে তাদের মুখের অভিব্যক্তি ও হাসি-ভাব একই রকম হতে থাকে।