অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে প্রায়সই দেখা যায় যে, মহিলারা শাল, জ্যাকেট বা স্কার্ফ পরে আছেন। অন্যদিকে পুরুষরা হাফ হাতা শার্ট বা টি-শার্ট পরে আরামে বসে আছেন। এর থেকে স্পষ্ট যে মহিলাদের বেশি ঠান্ডা লাগে। অফিসে পুরুষ কর্মচারীরা যখন এসির তাপমাত্রা কমাতে বলেন, মহিলারা তাপমাত্রা বাড়াতে থাকেন।
অফিসের এসি নিয়ে ঝগড়া খুবই সাধারণ একটা বিষয়। এখন প্রশ্ন হল, এটা কি শুধুমাত্র পছন্দ-অপছন্দের বিষয়? নাকি এর পিছনে কোনও অন্য কারণ আছে? এই বিষয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছিল, যেখানে দেখা গেছে যে এসি ঘরে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন। শুধু তাই নয়, এটি তাদের কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
পুরুষদের তুলনায় মহিলারা কেন বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন?
কেন পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি ঠান্ডা লাগে?
ধীর বিপাক
মহিলাদের শরীর ধীরে ধীরে শক্তি পোড়ায়, তাই তাদের শরীরে কম তাপ উৎপন্ন হয়।
শারীরিক চেহারা
মহিলাদের পেশী কম থাকে (যা তাপ উৎপন্ন করে) এবং ত্বকের নিচে বেশি চর্বি থাকে। চর্বি শরীরকে ঢেকে রাখে, কিন্তু এর জন্য আরও ঠান্ডা অনুভব হয়।
হরমোনের পরিবর্তন
পিরিয়ডের সময় হরমোন পরিবর্তিত হতে থাকে, যা শরীরের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে।
২০১৫ সালে নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ১৯৬০-র দশকে, গড়ে ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষের বিপাকের (অর্থাৎ শরীরের শক্তি পোড়ানোর হার) উপর ভিত্তি করে অফিসের তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর ফলে, মহিলাদের প্রকৃত চাহিদা প্রায় ৩৫% বেশি বলে অনুমান করা হয়েছিল। এই কারণেই মহিলারা অফিসের তাপমাত্রা ঠান্ডা এবং অস্বস্তিকর মনে করতে শুরু করেছিলেন।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা মহিলাদের তাদের কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। ২০১৯ সালে PLOS One-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় ৫০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দেখা গেছে, যখন ঘর উষ্ণ ছিল, তখন মহিলারা গণিত এবং ভাষার কাজে আরও ভাল পারফর্ম করেছিলেন। অন্যদিকে, পুরুষরা ঠান্ডা ঘরে একটু ভাল কাজ করেছে, কিন্তু পার্থক্য খুবই কম ছিল। এই কারণে, গবেষকরা বিশ্বাস করেন, অফিসের তাপমাত্রা সামান্য বাড়ানো হলে, মহিলাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষদের কাজের উপর কোন প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ, অফিস একটু উষ্ণ রাখলে পরিবেশ সবার জন্য আরামদায়ক হতে পারে এবং কাজের ফল উন্নত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
দিল্লির অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডঃ গীতা প্রকাশ বলেন,মহিলাদের ঠান্ডা লাগার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণত তাদের রক্তচাপ একটু কম থাকে, যার কারণে তারা ঠান্ডার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে, অনেক মহিলা ঠিক মতো খেতে পারেন না, যার ফলে ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে এবং ঠান্ডা বেশি লাগে। দীর্ঘক্ষণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসে থাকার ফলে শরীরে শক্ত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যেসব মহিলাদের ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসক পরামর্শ দেন যে, অফিসে একটু হাঁটা এবং কথা বলার অভ্যাস করা উচিত। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, পেশী শক্তিশালী থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
অফিসের আদর্শ তাপমাত্রা
এই সমস্যা সমাধানের জন্য, ভারতের ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (BEE) ২০২০ সাল থেকে এসির ডিফল্ট তাপমাত্রা ২৪° সেলসিয়াস নির্ধারণ করেছে। ডঃ প্রকাশ আরও বিশ্বাস করেন যে ২৪° সেলসিয়াস বেশিরভাগ মানুষের জন্য আরামদায়ক। যদি অফিসে ভিড় থাকে, তাহলে তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ২২° সেলসিয়াসে আনা যেতে পারে, তবে তাপমাত্রা খুব ঠান্ডা রাখা এড়িয়ে চলা উচিত।