প্রতীকী ছবিডেটিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর খুব একটা অবাস্তবিক নয়। প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করা, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার টোটকা থেকে শুরু করে মানসিক সমস্যার সমাধানেও AI (Artificial Intelligence) ব্যবহার বেড়েছে ইদানিং। কেউ মানুক কিংবা না মানুক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীরবে আধুনিক সম্পর্কের অংশ হয়ে উঠছে।
মজার বিষয় হল, হ্যাপন (ডেটিং অ্যাপ) সম্প্রতি ডেটিং ট্রেন্ড নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে AI সিচুয়েশনসিপ নিয়ে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। AI আপনার ক্রাশকে চুরি করে নিচ্ছে, তেমনটা নয়। নীরবে এটি আপনার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিজেকে আরও ভাল ভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
পরিসংখ্যান
৫৪% সিঙ্গল মানুষ তাদের ক্রাশের সঙ্গে একটি AI-এর সম্পর্কে আপত্তি করেন না। এভাবেই ডিজিটাল সঙ্গী বিষয়টি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বাস্তবিক জীবনে। একইসঙ্গে ৪১% মেনে নিচ্ছেন, AI তাঁদের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে অস্বস্তিবোধ কাটিয়ে দিতে সহায়ক হয়। বন্ডিং, কেমিস্ট্রি তৈরি করে দিতেও সাহায্য করে।
সারা ভারতের ২ হাজার মানুষের উপর এই সমীক্ষা করা হয়েছে। AI-এর ব্যবহার যত বাড়ছে ততই মানুষের মধ্যে চ্যাটবটের সঙ্গে বন্ডিং তৈরি করা, তার থেকে থেরাপি নেওয়া এমনকী রোমান্টিক সম্পর্কও গড়ে তুলছে। ভারতের ডিজিটাল ডেটিং মার্কেট ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আরও বেশি সংখ্যক তরুণ-তরুণী অনলাইন ডেটিং অ্যাপে মনোনিবেশ করছেন।
এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে জেন জি। চলতি বছরের শুরুতে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, 'জয়ী এআই' নামে একটি চ্যাটবটে ৮৩% জেন জি আবেগঘন সম্পর্ক তৈরি করছে AI-এর সঙ্গে।
কেন এই প্রবণতা বাড়ছে?
মানুষের আবেগ নিয়ে কথা বললেই আমাদের মনে প্রথমেই ভেসে ওঠে মায়া, সূক্ষ্ম অনুভূতি। সম্পর্কের জগতে আবেগের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই জায়গাতেই এখন প্রবল ভাবে জায়গা করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আজ মানুষ শুধু তথ্য বা কাজের সুবিধার জন্যই নয়, রোমান্টিক সম্পর্কের জন্যও AI-এর দিকে ঝুঁকছে। মুম্বই ভিত্তিক রিলেশনশিপ বিশেষজ্ঞ প্রতীক জৈন ব্যাখ্যা করে বলেন, 'নিরন্তর ক্লান্তি, মানসিক অবসাদে যখন মানুষ বাস্তব সম্পর্কে আর ভরসা খুঁজে পায় না, তখনই তারা AI-এর কাছে সামান্য সান্ত্বনার জন্য ঝুঁকে পড়ে। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ছাড়া রোমান্সের ক্ষেত্রে মানুষ মানসিক ভাবে মেশিনের সঙ্গে জড়াতে শিখেছে। তবে কারও কাছে হয়তো স্বীকার করতে পারছে না, সে চ্যাটবটের প্রেমে পড়েছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, যৌন তৃপ্তির ক্ষেত্রে জড়ো বস্তুকে ব্যবহার করা হয়।'
সর্বদা উপস্থিত থাকা, বিচারহীন প্রতিক্রিয়া AI-এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণ যা মানুষকে ভীষণ ভাবে টানে। এরা এমন এক সঙ্গী হয়ে ওঠা যারা শোনে, বদলে কিছু চায় না, অভিযোগও করে না। AI-এর কাছে মেলে সেই পারফেক্ট উত্তর যা মুহূর্তেই মিটিয়ে দেয় অনিশ্চয়তা, একাকিত্ব বা নিজের প্রতি সন্দেহ।
ঠিক যেমন 'তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া' সিনেমা রোবটরূপী কৃতি স্যানন আরিয়ানের (শাহিদ কাপুর) সমস্ত অভ্যাস শিখে নিয়েছিল, বাস্তবের চ্যাটবটও তেমনটাই ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, AI-এর সঙ্গে কথা বলা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি দেয় যা মানুষকে বারবার সেই ডিজিটাল সঙ্গীর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
দিল্লির রিলেশনশিপ কাউন্সিলর রুচি রুহ বলেন, 'AI অ্যালগোরিদম রোমান্টিক প্রয়োজন বুঝে নিতে পারে এবং ঠিক সেইরকম প্রতিক্রিয়া দেয় যা মানুষকে অ্যাটাচড ফিল করায়। তারা শুধু সাহায্য করে না, আপনার মুড বা পছন্দের সঙ্গে খাপও খাইয়ে নেয়, যা রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না।'
মানুষের জায়গা কি নিতে পারবে এরা?
হ্যাপন অ্যাপের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখনও ৪১% মানুষ ডিজিটাল চ্যাটবটের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে অস্বস্তি বোধ করে। অ্যালগোরিদম মানুষকে বুঝলেও বাস্তব সঙ্গীর সঙ্গে এর কোনও ভাবেই মিল থাকবে না। অত্যধিক AI নির্ভরতা বাড়াতে পারে অবাস্তব প্রত্যাশা, অবসেশন, একাকীত্ব এমনকী নিজের প্রতি হীনমন্যতাও। মানুষ বর্তমানে স্ক্রিন জীবন থেকে দূরে সরে বাস্তব অনুভূতির জগতে ফিরতে চায়। মানবিক স্পর্শ পেতে চায়। কিন্তু ঘেঁটে থাকা জীবন থেকে মুক্তি ও সান্ত্বনা পেতে সেই স্ক্রিনেই বারবার ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলত শেষ পর্যন্ত AI সিচুয়েশনশিপকে আপনি নিজের জীবনে কতটা জায়গা দেবেন, তা আপনার উপরই নির্ভর করছে।