ঘনিষ্ঠরা বলতেন, তিনি নাকি ছোটো-বড় কোনও অনুষ্ঠানই মিস্ করতেন না। বরং বলা ভালো, খাদ্যরসিক ছিলেন বলেই খাবার সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। তা সে পুজো হোক বা দোল, বিবাহবার্ষিকী হোক বা কারও জন্মদিন, সবখানেই উত্তমকুমার ছিলেন মধ্যমণি। এক সময়ে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া মানুষটি পেশার কারণেই কড়া ডায়েট মেনে চলতেন। তবে মাঝে মধ্যে মুখরোচক খাবার চেখে দেখতেও ভুলতেন না। মহানায়কের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কাঁটা চচ্চড়ি। মহানায়কের ভবানীপুরের বাড়ির হেঁশেলেও জমিয়ে রান্না করা হত এই কাঁটা চচ্চড়ি। সেখানে অবশ্য সেই রান্নাটি করতেন মহানায়কের মা। তবে সেই রান্নায় পাঁচ ফোঁড়ন, টোম্যাটো ইত্যাদি দেওয়ার চল ছিল। সুপ্রিয়াদেবী সেই রান্না শিখে নিজের মতো করে রাঁধতেন। তাঁর রান্নায় ছিল বাঙাল স্বাদের স্পর্শ। সুপ্রিয়াদেবীর রেসিপি মেনে নিজের বাড়িতেও একবার মহানায়কের প্রিয় এই কাঁটা চচ্চড়ি রান্না করে দেখতে পারেন।
উপকরণ
ভেটকি মাছের কাঁটা, মাথা মিলিয়ে ১ কেজি
হলুদ গুঁড়ো ৫ টেবিল চামচ
কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো- ৩-৪ টেবিল চামচ
রসুনবাটা- ৪ টেবিল চামচ
কাঁচালঙ্কা- ৮-১০টি
পেঁয়াজ- ৩টি
নুন- স্বাদ অনুযায়ী
চিনি- সামান্য
সর্ষের তেল (এই রান্নায় তেল একটু বেশি লাগে)
পদ্ধতি
মাছের মুড়োর টুকরো এবং কাঁটা নুন হলুদ মাখিয়ে রাখুন। রসুন বেটে নিন। পেঁয়াজ ঝিরঝিরি করে কেটে নিন। কাঁচালঙ্কা চিরে রাখুন। আড়াই চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং চার চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো একটি বাটিতে নিন। তাতে সামান্য জল দিয়ে মিশিয়ে গাঢ় পেস্ট তৈরি করুন। কড়াইয়ে বেশ খানিকটা সর্ষের তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে দুই টেবিল চামচ রসুন দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। এবার এই তেলে মাছের কাঁটা দিয়ে ভেজে নিন। মাছের ভাজা অংশ একটি পাত্রে তুলে রাখুন। ওই তেলেই পেঁয়াজ দিয়ে সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন। প্রয়োজনে আরও তেল দিন। পেঁয়াজ তুলে রাখা হয়ে গেলে তেলে সামান্য চিনি দিন। এতে রান্নায় খুব সুন্দর রং আসবে। চিনি গলে গেলে তাতে আরও দুই চামচ রসুন বাটা দিন। নাড়াচাড়া করে তাতে কাঁচালঙ্কা দিয়ে হালকা ভাজুন। এতে হলুদ-কাশ্মীরি লঙ্কার পেস্ট দিয়ে ভালো করে কষাতে থাকুন। মশলা যাতে পুড়ে না যায়, তা সুনিশ্চিত করতে তাতে সামান্য জল দিয়ে ভালো করে কষান। মশলার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে এবং তেল সামান্য আলাদা হলে তাতে মাছের কাঁটা ভাজা দিয়ে ভালো করে মেশান। এরপর এতে পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে ফের ভালো করে মেশান। দরকার হলে সামান্য নুন যোগ করুন। প্রয়োজনে সামান্য জল দিতে পারেন। চচ্চড়ি কষাতে থাকুন। যতক্ষণ না তেল আলাদা হচ্ছে ততক্ষণ কষান। রান্নাটি ঝোল ঝোলও যেমন হবে না, তেমনই একেবারে শুকনোও হবে না। গরম গরম ভাতের সঙ্গে কাঁটা চচ্চড়ি মেখে খেতে অসাধারণ লাগে।