
মোবাইল ফোন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ, নিত্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ থেকে বিনোদন সব কিছুর উপর মানুষ ফোনের নির্ভরশীল। তবে যেমন কথায় বলে, 'বিজ্ঞান আশীর্বাদের পাশাপাশি অভিশাপ'। ফোন ব্যবহার করে নানা সুবিধার পাশাপাশি, এর উপর নির্ভরতা বাড়ছে। যার মধ্যে বিপুল পরিমাণ মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকছে সোশ্যাল মিডিয়া। যার মাধ্যে রিলসের জন্য দিনের অনেকটা সময় যাচ্ছে। কীভাবে কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টার কেটে যাচ্ছে, সে সম্পর্কেও নেটিজেনরা অবগত নয়।
মোবাইলের যুগে রিয়েল আর রিলের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলছেন বহু নেটিজেন। রিল তৈরি করে বা দেখে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে দ্রুত রিল দেখার প্রবণতা বাড়ছে। এর ক্রমাগত ব্যবহারে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, উদ্বেগের মাত্রা বাড়তে পারে। যারা রিল দেখেন, তারা অনেকেই একা থাকতে পছন্দ করেন। এছাড়াও এধরনের মানুষের মধ্যে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আপনিও কি দিনরাত রিলস দেখছেন? তাহলে হয়তো আপনিও এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি 'ব্রেন রট', এই শব্দটিকে ২০২৪ সালের 'ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার' হিসাবে বেছে নিয়েছে। যার অর্থ মস্তিষ্কের পচন। করোনাকালে একটা নতুন শব্দ- 'ডুমস্ক্রোলিং'-র জন্ম হয়েছিল। নেতিবাচক সংবাদ বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পড়তে বেশি সময় ব্যয় করাকে ডুমস্ক্রোলিং বলে। এটি একটি ক্ষতিকারক অভ্যাস হতে পারে যা, মানসিক স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
অক্সফোর্ড বলছে, এই ডুমসস্ক্রোলিংয়ের ফলাফল হল ব্রেন রট বা মাথায় পচন। অপ্রোয়জনীয় জিনিস, বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় রিলস, শর্টস দেখা মস্তিষ্কের জন্যে ক্ষতিকারক। অকারণে সারাদিন অনলাইন থেকে, নেতিবাচক ও উদ্দেশ্যেহীন বিভিন্ন কনটেন্ট দেখে ব্রেন রট হয়ে মানুষের মানসিক অবস্থা বদলে যাচ্ছে। ফলে তারা অজান্তেই নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। স্বাভাবিক বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারছে না। ধৈর্য কমছে, সৃষ্টিশীলতা- ভাবনাচিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকী মানবিক গুণগুলিও নষ্ট হচ্ছে ক্রমে।
২০২৩ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে এই শব্দের ব্যবহার ২৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত রিলস দেখা এড়াতে, শুধুমাত্র প্রয়োজন হলেই মোবাইল ব্যবহার করুন। বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, আপনার পছন্দের জিনিসগুলিতে সময় কাটান।