Alcohol Effect: মদ্যপানের পর এক্সারসাইজ করলে কি শরীর ডিটক্স হবে? ব্যাখ্যা দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

মদ্যপান করার পর শরীরচর্চা করলে কি শরীর ডিটক্স হয়? ব্যায়াম, জিম এক্ষেত্রে কতটা যথাযথ? জেনে নিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ।

Advertisement
মদ্যপানের পর এক্সারসাইজ করলে কি শরীর ডিটক্স হবে? ব্যাখ্যা দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকপ্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • মদ্যপান করার পর কি শরীরচর্চা করলে ডিটক্স হবেন?
  • ব্যায়াম বা জিম করলে মদ্যপানের প্রভাব কাটবে?
  • জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর অল্প একটু মদ্যপান শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে কি? আবার নিয়মিত ব্যায়াম করলে কি সত্যিই মদ্যপানের প্রভাব কাটিয়ে ওঠা যায়? বিশেষজ্ঞদের সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, না। 

শারীরিক অনুশীলন কিছুটা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু অ্যালকোহল শরীরকে এমন একাধিক স্তরে প্রভাবিত করে যা শুধুমাত্র ব্যায়ামের মাধ্যমে বদলানো সম্ভব নয়। ড. প্রকাশ সিনহা, পিএসআরআই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ব্যাখ্যা করেন, 'মদ প্রায় প্রতিটি বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। অ্যালকোহল হজমের গতিও ধীর করে। প্রোটিন সংশ্লেষে বাধা দেয় এবং ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন বি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান কমিয়ে দেয়, যা শক্তি উৎপাদন ও পেশি পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য।'

নিয়মিত মদ্যপান শরীরে জলশূন্যতা, প্রদাহ ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, যা ব্যায়ামের পর পেশি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। এ প্রসঙ্গে ড. প্রকাশ সিনহা বলেন, 'নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন, লিভারের কার্যকারিতা ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। কিন্তু এটি মদের ক্ষতিকর প্রভাব পুরোপুরি দূর করতে পারে না। ব্যায়াম শরীরকে কিছুটা সামলাতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত বা ঘনঘন মদ্যপানের ফলে যে ক্ষতি হয়, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ পায়।'

কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শারীরিকভাবে সক্রিয় মদ্যপায়ীরা নিষ্ক্রিয়দের তুলনায় কিছুটা ভাল অবস্থায় থাকেন। তবে একটি সীমা পর্যন্তই। ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগ, লিভারে চর্বি জমা এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। এমনকী তারা মাঝারি মাত্রায় মদ পান করলেও, এই ঝুঁকি কম থাকে। 

তবে ড. প্রকাশ সিনহা সতর্ক করে বলেন, 'ব্যায়াম ঝুঁকি কিছুটা কমায়, কিন্তু মদ্যপানের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পারে না। একবার পানীয়ের পরিমাণ অত্যধিক লেভেলে পৌঁছে গেলে, ব্যায়ামের সব উপকারই হারিয়ে যায়।' অর্থাৎ, সক্রিয় থাকা কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লাঘব করতে পারে। কিন্তু এটি কোনও প্রতিরোধক ঢাল নয়। সক্রিয় মদ্যপায়ীর হৃদপিণ্ড ও লিভার কিছুটা ভাল কাজ করতে পারে। তবুও অ্যালকোহল কোষ, হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদে তার ক্ষতিকর প্রভাব রাখবেই।

Advertisement

ড. প্রকাশ সিনহা সতর্ক করেন, 'মদ্যপানের পরপরই ব্যায়াম করা একেবারেই পরামর্শযোগ্য নয়। মদ ভারসাম্য, সমন্বয় ও পেশি নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়, যা আঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি শরীরকে ডিহাইড্রেটও করে, ফলে মদ্যপানের পর ব্যায়াম নিরাপদ নয়।' অন্যদিকে, মদ্যপানের আগে ব্যায়াম শরীরের বিপাকীয় হার ও রক্ত সঞ্চালন কিছুটা বাড়ায়। তিনি বলেন, 'তবুও মদ্যপান ও ব্যায়ামের মধ্যে অন্তত কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান রাখা জরুরি এবং ব্যায়ামের আগে ও পরে যথেষ্ট জল খেতে হবে।

মাঝারি মাত্রার মদ্যপায়ীদের জন্য মূল চাবিকাঠি হল, সংযম ও ধারাবাহিকতা। ড. প্রকাশ সিনহা পরামর্শ দেন, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়াম (যেমন ব্রিস্ক ওয়াকিং, সাইক্লিং বা সাঁতার) অথবা ৭৫ মিনিট ঘাম ঝরানো ব্যায়াম, পাশাপাশি সপ্তাহে ২ দিন শক্তি-নির্ভর অনুশীলন করা উচিত। তিনি বলেন, 'যে কার্যকলাপগুলো পেশি গঠন করে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে এবং লিভারের বিপাক উন্নত করে। তা শরীরকে মাঝেমধ্যে মদ্যপানের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। তবে কোনও পরিমাণ ব্যায়ামই দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত মদ্যপানের জৈবিক ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে দিতে পারে না।'

শেষ পর্যন্ত, ফিটনেস শরীরকে শক্তিশালী করতে পারে, কিন্তু এটি মদের ডিটক্স নয়। স্বাস্থ্যকর জীবনের মূল সূত্র হল, আপনি যতটা নড়াচড়া করবেন, ততটাই সংযতভাবে মদ্যপান করতে হবে।

 

POST A COMMENT
Advertisement