Child Heart Attack: আজকাল অনেক সময়েই দেখা যায়, বাড়ির ছোটরা মোবাইল বা কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলায় মগ্ন। অভিভাবকরাও কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্তানকে সাময়িক শান্ত রাখার জন্য হাতে ধরিয়ে দেন ফোন বা ট্যাব। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস শিশুদের হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়াতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের মতে, ভিডিও গেম খেলার সময় অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ শিশুদের শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটায়, যা তাদের হৃদস্পন্দনে বড় রকমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর সেখান থেকেই বাড়ে গুরুতর হৃদরোগের ঝুঁকি।
গেম খেলার সময় হঠাৎ জ্ঞান হারানো
‘হার্ট রিদম’ নামে এক আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, অনেক শিশু গেম খেলার সময় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এমন ঘটনাগুলোর পেছনে একটি নির্দিষ্ট ধরনের হৃদরোগের প্যাটার্ন পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, গেম খেলার উত্তেজনা শিশুর হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সাড়া-প্রতিক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে। বিশেষ করে মাল্টিপ্লেয়ার গেম, যেখানে শিশুরা প্রতিযোগিতামূলক যুদ্ধের মতো গেম খেলে, সেগুলিতে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দ্য হার্ট সেন্টার ফর চিলড্রেন-এর চিকিৎসক ক্লেয়ার এম লানলি। তিনি জানান, যেসব শিশু আগে থেকেই অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যায় ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে ভিডিও গেম খেলাটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
ক্লেয়ার আরও বলেন, যদি কোনও শিশু গেম খেলার সময় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তাহলে তার হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করানো উচিত। এটা বড় ধরনের হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
২২টি শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ
গবেষকেরা বিভিন্ন দেশের ২২টি শিশুর কেস স্টাডি করেছেন, যারা ভিডিও গেম খেলতে গিয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ছিল মাল্টিপ্লেয়ার ওয়ার গেমে যুক্ত। গবেষণায় দেখা যায়, কিছু শিশু হার্টবিট থেমে গিয়ে মারা যায়, কেউ বা চিকিৎসার পরেও হৃদরোগের ঝুঁকিতে থেকে যায়।
এছাড়া ধরা পড়েছে কিছু জটিল হার্ট কন্ডিশন যেমন ক্যাটেকোলামিনার্জিক পলিমরফিক ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া (CPVT) এবং কনজেনিটাল লং কিউটি সিনড্রোম (LQTS)। এই অসুখগুলো মূলত অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণে হয়।
জেনেটিক কারণেও বিপদ
গবেষকরা বলছেন, হৃদরোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৩ শতাংশ আক্রান্ত শিশুর পরিবারে আগে থেকেই হৃদরোগের ইতিহাস ছিল। এমনও হয়েছে, একটি শিশুর হার্টের সমস্যা ধরা পড়ার পর দেখা গিয়েছে তার বাবা, কাকা বা দাদাও একই সমস্যায় ভুগেছেন।
অভিভাবকদের জন্য বিশেষ পরামর্শ
গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যদি কোনও শিশুর হৃদরোগের লক্ষণ দেখা যায়, বা পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে তাকে ভিডিও গেম, বিশেষ করে উত্তেজনামূলক ওয়ার গেম খেলার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
গবেষকরা বলছেন, গেম খেলার সময় অনেক সময় শিশুরা অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে, জয়ের লড়াইয়ে আবেগে ভেসে যায় কিংবা অনলাইনে অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থাগুলো হৃদযন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ভিডিও গেম মানেই নিরাপদ নয়
গবেষণার সহ-লেখক ক্রিশ্চিয়ান টার্নার বলেছেন, আমরা আগে ভাবতাম, হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বেশি সাবধান থাকতে হবে মাঠে খেলাধুলার সময়। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঘরে বসেই ভিডিও গেম খেলতে খেলতে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই গবেষণা অভিভাবকদের চোখ খুলে দিতে পারে। ভিডিও গেমে সময় কাটানো মানেই নিরাপদ—এই ধারণা ভুল। যদি পরিবারে হার্টের সমস্যা থেকে থাকে, বা সন্তান অতিরিক্ত গেম খেলার সময় অস্বাভাবিক আচরণ করে, তাহলে তার উপর নজর রাখা খুব জরুরি।