দুনিয়াজুড়ে ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এ দেশেও ঊর্ধ্বমুখী ডায়াবেটিস। এই অসুখে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে। অগ্ন্যাশয় যখন ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেজন্য ইনসুলিন খুবই দরকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। কম গ্লাইসেমিক খাবার খেলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমন কয়েকটি খাবার আছে যেগুলি শরীরে প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে ডায়াবেটিস রোগীরা এই ৫টি খাবার খান-
প্রাকৃতিক ইনসুলিন অ্যাভোকাডো- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাভোকাডোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। শরীরে প্রাকৃতিক ইনসুলিনের মতো কাজ করে। খিদেও পায় না জলদি। ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। অ্যাভোকাডো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকারী।
বাদাম, আমন্ড- ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে বাদাম খাওয়া দরকার। কাজু, আখরোট, আমন্ড এবং চিনাবাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই শুকনো ফলগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার সমৃদ্ধ বাদাম শরীরকে সুস্থ রাখে।
অলিভ ও ফ্ল্যাক্সসিড তেল- অলিভ ও ফ্ল্যাক্সসিড তেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। অলিভ অয়েলে টাইরোসল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা প্রাকৃতিক ইনসুলিন। এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর। অলিভ অয়েলের মতো ফ্ল্যাক্সসিড অয়েলও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ফাইবার সমৃদ্ধ ফ্ল্যাক্সসিড তেল হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। অলিভ অয়েল খাবার থেকে গ্লুকোজের হজমে কার্যকর। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
মাছ - হেরিং, স্যামন এবং সার্ডিন জাতীয় কিছু মাছ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি আমিষ খান, তবে এই ধরনের মাছগুলি সপ্তাহে দু'বার খেতে পারেন।
অ্যালোভেরা- অ্যালোভেরা আয়ুর্বেদিক ভেষজ। যা সহজলভ্য। অ্যালোভেরা সুগার প্রতিরোধে সক্ষম। সুগারের জন্য অব্যর্থ টোটকা অ্যালোভেরার রস। অ্যালোভেরায় হাইড্রোফিলিক ফাইবার, গ্লুকোমানান এবং ফাইটোস্টেরলের মতো উপাদান, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের রামবাণ।
নিম- নিম পাতা তো ডায়াবেটিসের শত্রু। ওষুধ এবং সাবান তৈরিতে এটি ব্যবহার করছে বহু কোম্পানি। নিমপাতা পিষে খেলে পেটে থাকা জীবাণুও মারা যায়। ত্বক সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমের রস সবচেয়ে সঠিক চিকিৎসা বলে মনে করা হয়।
আমলা- আমলার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমলা ত্বক থেকে পেট পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। আমলায় উপস্থিত ভিটামিন সি হাড়ের জন্যও ভালো বলে বিবেচিত হয়। প্রতিদিন আমলা রস খেলে ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তি মেলে।
শুধু খাবারই নয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দরকার সুস্থ জীবনযাপনও।
শরীরচর্চা- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীরকে সচল রাখা দরকার। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত। শরীরচর্চায় করলে ঘাম ঝরে। শরীর সুস্থ থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম- ঘুমোলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন ঘুমের সম মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত এই মেলাটোনিন প্রাকৃতিক ইনসুলিন। তবে বেশিক্ষণ ঘুমোনোও উচিত নয়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমোনো উচিত।
আরও পড়ুন- পেটভর্তি খেয়েও কেন রোগা? 'সিক্রেট' জানালেন বিজ্ঞানীরা