আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক নতুন প্রবণতা চোখে পড়ছে, ডায়েট কোল্ড ড্রিঙ্কসের প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি। বিশেষ করে জেনারেশন জেড, অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মানো তরুণদের মধ্যে এই পানীয়ের প্রতি টান ক্রমাগত বাড়ছে। কেউ কেউ একে ‘ফ্রিজ সিগারেট’ বলেও ব্যাখ্যা করছেন, কারণ মানুষ ক্লান্তি বা মানসিক চাপে পড়লে যেমন সিগারেট বা কফি খায়, অনেকেই এখন তেমন পরিস্থিতিতে ফ্রিজ থেকে ডায়েট কোল্ড ড্রিঙ্কস বের করে পান করেন।
কেন এই আসক্তি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পানীয়ে থাকা কৃত্রিম মিষ্টি যেমন অ্যাসপার্টেম বা এসেসালফেম পটাসিয়াম সাময়িকভাবে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়াতে পারে। সেই ঠান্ডা ভাব, ঝাঁঝালো স্বাদ, এই সবকিছু মিলিয়ে তৈরি হয় এক ধরণের ‘সেন্সরি প্যাকেজ’, যা কিছুটা হলেও সিগারেট বা কফির মতোই আসক্তি তৈরি করতে পারে। যদিও ডায়েট কোল্ড ড্রিঙ্কসে চিনি নেই এবং ক্যালোরিও কম, তবু একে স্বাস্থ্যকর বলা যায় না।
তরুণদের পছন্দের কারণ
ভারতে কোমল পানীয়ের বাজার গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালে এই বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৮.২৫ বিলিয়ন ডলার। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে তা ৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণরা ‘ক্যালরি সচেতন’ এবং শরীরচর্চার দিকে আগ্রহী, তাই তারা সাধারণ কোলার চেয়ে ডায়েট সংস্করণ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু তারা এই পানীয়ে থাকা কৃত্রিম উপাদানের প্রভাব সম্পর্কে প্রায়ই অবহিত নয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, দৈনিক ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যাসপার্টেম গ্রহণ নিরাপদ হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি বিপাক ক্রিয়া ও অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবতী মহিলা, মাইগ্রেন বা খিঁচুনিতে ভোগা মানুষদের এই ধরনের কৃত্রিম মিষ্টি থেকে দূরে থাকা উচিত।
সমস্যা কখন শুরু হয়?
মাঝেমধ্যে ডায়েট কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া ক্ষতিকর না হলেও, যদি কেউ নিয়মিত এটি মানসিক চাপ বা একঘেয়েমি দূর করার জন্য পান করেন, তাহলে তা ধীরে ধীরে আসক্তির রূপ নিতে পারে। এবং যখন তা দৈনন্দিন জীবনে মেজাজ ও কাজের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তখন তা চিন্তার বিষয়।
স্বাস্থ্যকর বিকল্প কী?
এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ফিজি পানীয় হিসেবে কম্বুচা, স্পার্কলিং ওয়াটার বা ভেষজ আইসড টি বেছে নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, স্ট্রেচিং, হালকা হাঁটা বা গভীর শ্বাসের অনুশীলন, এসব মানসিক চাপ মোকাবিলায় কার্যকর হতে পারে।