scorecardresearch
 

খুড়তুতো-পিসতুতো-মামাতো ভাই-বোনের দেদার বিয়ে, পাকিস্তানে বাড়ছে এই রোগের ঝুঁকি

পাকিস্তানে তুতো ভাই-বোনের বিয়ের ফলে বাড়ছে এই রোগ, ডিসঅর্ডার। তাতে বাড়ছে উদ্বেগ। জার্মান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিস্তারিত রিপোর্ট।

Advertisement
প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • পাকিস্তানে তুতো ভাই-বোনের বিয়ে
  • ফলে বাড়ছে এই Disorder
  • সন্তানদের ভুগতে হচ্ছে আজীবন

পাকিস্তানি কিছু এলাকায় খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের পরম্পরা রয়েছে। এভাবেই বিয়ের ফলে বাচ্চাদের বিভিন্নভাবে বংশানুক্রমিক রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। যদিও এমন নয় যে কাছাকাছি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে শুধু ইসলাম বা পাকিস্তানে রয়েছে, জেরুজালেম, আরব, এদের মধ্যে এবং দক্ষিণ ভারতীয় কিছু কিছু এলাকায় নিজেদের সম্পর্কিত আত্মীয়দের মধ্যে এমন বিয়ের চল রয়েছে।

ইসলামে খুড়তুতো, মামাতো, মাসতুতো, পিসতুতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের অনুমতি রয়েছে। যদিও বিয়ের এই পদ্ধতি বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু পাকিস্তানি কিছু এলাকায় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে এক রকমের পরম্পরা হয়ে গিয়েছে. যদিও কিছু লোক এই পরম্পরা বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে অনেকেই এটা মানেন না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ এই পরম্পরাতেই আটকে থাকতে পছন্দ করছেন বা তাঁরা শৃঙ্খলা ভেঙে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক নন বলা হয়েছে। যে কারণে জেনেটিক ডিসঅর্ডার এর ঘটনা সামনে আসছে।

কাজিন ম্যারেজ এ কি কি সমস্যা হচ্ছে?

জার্মানির DW নিউজে পাকিস্তানের ওই লোকের ওপর বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছেন। যাঁরা, আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করেছেন, তাঁদের ইন্টারভিউ নিয়ে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরের বসবাসকারী ৫৬ বছরের গফুর হোসেন, আট বাচ্চার বাবা। তিনি জানিয়েছেন যে তিনি আদিবাসী রীতি অনুসারে তার কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে যে তিনি তাঁর বাচ্চাদের বিয়ে পরিবারের খুব কাছাকাছি সম্পর্কিত আত্মীয়দের মধ্যেই করে দেন। যদিও সেই ব্যাপারে বিয়ের পর হওয়া বাচ্চাদের প্রচলিত আনুষঙ্গিক রোগ সমস্যার বিষয়ে খুব ভাল করেই জানেন তিনি। ১৯৮৭ সালে নিজের মামাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের তিন বাচ্চা কোনও না কোনও ভাবে ডিজঅর্ডারে সঙ্গে লড়াই করছে।


গফুর ডাবলু নিউজ কে জানিয়েছেন যে তাঁর ছেলে মস্তিষ্ক সামান্যই বিকশিত হয়েছে। তাঁর মেয়ে কথা বলতে পারে না ভালো করে। যেখানে আরেকজন বধিরত্বের শিকার হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, আমার সবচেয়ে বেশি আফসোস যে তারা পড়াশোনা করতে পারে না। আমি সবসময় তাদের বিষয়ে চিন্তিত থাকি আমার এবং আমার স্ত্রী মৃত্যুর পর তাদের দেখভাল হবে কীভাবে? তাদের জীবন চলবেঅ বা কেমন করে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। গফুর জানিয়েছেন যে তাদের ছোট ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ের জন্য তাদের সমাজে প্রচুর চাপ রয়েছে। তিনজনের একজন ছেলে এবং একজন মেয়ের বিয়ে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে করতে হয়েছে। তাদের পরিবারের মেডিকেল হিস্ট্রিতে ব্লাড ডিজঅর্ডার লার্নিং ডিসাবিলিটি, অন্ধত্ব, বধিরতার সমস্যা রয়েছে। জানিয়েছেন যে ইনব্রিডিং অনেক কারণই হচ্ছে অন্য জাতি বা অন্য সমাজের সঙ্গে বিয়ে দিলে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হতে পারে।

Advertisement

কেন হচ্ছে সমস্যা?

খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে বিয়ের সমস্যা তখন সামনে আসে, যখন দু'জন পার্টনার এর মধ্যে একজনের কোন বংশানুক্রমিক রোগ রয়েছে। সম্প্রদায়ের ভিতরে বিয়ে করলে হতে পারে পার্টনার ওই রোগের বাহক। তখন দুজনের জিনগত ত্রুটির বাচ্চার মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে। সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করলে তাদের জিন পুল বড় হতে শুরু করে। তখন অনেক সমস্যা কমে যায়।

পাকিস্তানের জেনেটিক মিউটেশন সমস্যা

২০১৭ তে পাকিস্তানের জেনেটিক মিউটেশন এর উপর রিপোর্টে মিউটেশনের প্রকার এবং তার মধ্যে সম্বন্ধে ডিজঅর্ডারের ট্র্যাক করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানের সম্পর্কে রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে হলে জেনেটিক ডিজঅর্ডার বেঁধে যাচ্ছে। ডেটাবেজ অনুসারে পাকিস্থানে পাওয়া যাওয়া ১৩০ বিভিন্ন প্রকারের বংশানুক্রমিক বিবাহের এর মধ্যে এক হাজারের বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে পাকিস্থানে ইনব্রিডিং এর কারণে অনেক বেশি ডিজঅর্ডার মামলা সামনে আসছে। তিনি জানিয়েছেন খুব সহজেই চেনা যায়. কারণ সেগুলো বিশেষ জাতি এবং স্বজাতির মধ্যে পাওয়া যায়। সাধারণ বিষয় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমস্যা বংশানুক্রমিক থ্যালাসেমিয়া। যা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ আটকে দেয়।

স্টাডি রিপোর্ট কী বলছে?

রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এভাবে বিয়ের পর জন্মানো বাচ্চার বেশিরভাগ পাওয়া যায় হার্ট সংক্রান্ত রোগ বেশি হয়। পাশাপাশি সারা জীবনই বাচ্চাকে বহন করে বেড়াতে হয়। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কিছু নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সচেতনতা প্রয়োগে করে এটা এড়ানো যেতে পারত।

শুধু ইসলাম বা পাকিস্তানের সমস্যা নয়

শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের সমস্যা পাকিস্তানের রয়েছে  তা নয়। এটা ঠিক যে পাকিস্তানের সংখ্যাটা প্রচুর। তবে পাকিস্তান ছাড়াও জেরুজালেম, আরব, ইরান এবং দক্ষিণ ভারতীয় কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই রীতি এবং প্রথা রয়েছে। তবে একই গোত্রের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে বিয়ে হয় না। অন্য গোত্র হলে তবেই সেখানে বিয়ের সানাই বাজে।

Advertisement