দিনে কতটা জল খাবেন? বাড়ির বড়রা প্রায়শই বলে থাকেন, বেশি করে জল খেতে। এতে শরীর সুস্থ থাকে এবং কিডনিও পরিষ্কার হয়। বেশি পরিমাণে জল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলেও অনেক সময়েই বলা হয়। সত্যিই কি এমনটা হয়? জল অপরিহার্য তবে এর অর্থ এমনটা নয়, যত বেশি জল খাবেন কিডনি তত শক্তিশালী হবে। অনেক সময় মানুষ সচেতন ভাবে নয়, বাধ্যতামূলক ভাবেই অতিরিক্ত জল পান করে থাকেন। বা বাড়িতে বড়দের থেকে বকুনি খাওয়ার ভয়েও চটপট বোতলের জল শেষ করে ফেলেন ছোটরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির জল প্রয়োজন তবে সেই প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পান করলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অতএব, কিডনির আলে কতটা জলের প্রয়োজন তা জানাটা জরুরি।
কিডনির জন্য কতটা জল অপরিহার্য?
কিডনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত নুন অপসারণ করে এবং জল ও খনিজ পদার্থে ভারসাম্য বজায় রাখে। যখন শরীরে জলের স্তর পর্যাপ্ত থাকে, তখন কিডনি আরামে কাজ করতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, যত বেশি জল পান করবেন, কিডনি তত ভাল কাজ করবে। কিডনির জলের প্রয়োজন হয় কিন্তু তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়।
অতিরিক্ত জল পান উপকারী নয়
অনেকেই মনে করেন, সারাদিরে প্রচুর জল খেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে আরও বেশি সক্ষম হবে। তবে ডাক্তার এবং গবেষণকরা বলছেন, কেবল বেশি জল খেলেই দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কিডনির রোগ প্রতিরোধ হয় না। যদি কেউ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল পান করে তাহলে একটি কিডনির উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করবে। এমনকী কিছু মানুষের জন্য এটি বিপজ্জনকও হতে পারে। অতিরিক্ত দল ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে যাদের কিডনি ইতিমধ্যেই দুর্বল তাদের জন্য। অতিরিক্ত জল শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে হাইপোনেট্রেমিয়া হয়। এতে মাথা ঘোরা, ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
কতটা জল খাওয়া উচিত?
প্রতিটি ব্যক্তির কতটা জল প্রয়োজন তা তাদের বয়স, শরীরের ধরণ, আবহাওয়া এবং কাদের সময়সূচির উপর নির্ভর করে। প্রত্যেকের ৪-৫ লিটার করে জল খাওয়া উচিত, এমন কোনও নিয়ম নেই। সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার জলই যথেষ্ট। যদি আবহাওয়া খুব গরম থাকে অথবা তীব্র শারীরিক পরিশ্রম হয় তাহলে চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে।
আপনি সঠিক পরিমাণে জল পান করছেন কি না কীভাবে ঠিক করবেন?
যদি আপনার প্রস্রাবের রং হাল্কা হলুদ হয়, তাহলে বুঝবেন আপনি হাইড্রেটেড। যদি রং গাঢ় হলুদ বা খুব গাঢ় হয়, তাহলে জলের অভাব রয়েছে বুঝতে হবে। সারাদিনে অল্প অল্প করে দল পান করা ভাল। একবারে অনেকটা জল খেলে কিডনিতে চাপ পড়ে।
তবে শুধু জল খেলেই কিডনি সুস্থ থাকে না। খাদ্যাভ্যাস, নুন খাওয়া, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা ও শারীরিক কার্যকলাপও কিডনির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস দ্রুত কিডনির স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব, সুষম খাদ্য, কম নুন খাওয়া, কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত চেকআপ কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।