করোনার আবহে তীব্র শ্বাসকষ্ট, কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে রোগীকে। রাতে ভিন জেলা থেকে আসা রোগীর পরিবারের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বাইরে, রাস্তায়। হাতে টাকা, খাওয়ার সবই অপর্যাপ্ত। লকডাউনের ফলে আসেপাশের দোকানও সব বন্ধ। ফলে হাতে টাকা থাকলেও খাবার কিনে খাওয়ার কোনও উপায় নেই।
এই পরিস্থিতিতে ভাত-ডাল-সব্জি নিয়ে হাজির এক বছর পঞ্চাশের ব্যক্তি। কত টাকা লাগবে, জানতে চাওয়ার আগেই একে একে ওই রাস্তায় খবরের কাগজ পেতে বসে থাকা প্রায় সমস্ত মানুষের হাতেই এই খাবার তুলে দিলেন ওই ব্যক্তি। কলকাতার এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের সামনের রাস্তায় রাত কাটানো রোগীর পরিবারের লোকজনদের অনেকের কাছেই এখন তিনি পরিচিত মুখ, পরিত্রাতা পার্থ চৌধুরী।
শহরের সরকারি হাসপাতালের বাইরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, দূর-দুরান্ত থেকে পরিজনের চিকিৎসার জন্য আসা অসহায় মানুষগুলির পাশে লকডাউনের চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও রাতে দু-মুঠো খাবার নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁকে এখন অনেকেই অবশ্য ‘হসপিটাল-ম্যান’ হিসাবেই চেনেন।
কখনও ভাত-ডাল-সব্জি, কখনও আবার দুধ-কলা-পাউরুটি শহরের পথে অসহায় ভাবে রাত কাটানো রোগীর আত্মীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘হসপিটাল-ম্যান’ পার্থ চৌধুরী।
কালীঘাটের মহামায়া লেন এলাকার বাসিন্দা পার্থবাবু পেশায় পুল কার চালক। সম্বল একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মারুতি ইকো গাড়ি। তাঁর উপার্জনই একমাত্র ভরসা তাঁর পরিবারের। সংসারেও তেমন একটা সচ্ছলতা নেই। তবুও প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষের মুখে বিনা পয়সায় খাবার তুলে দেন পার্থবাবু।
কী ভাবে পুল কার চালিয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষের নিখরচায় খাবার তুলে দিচ্ছেন ‘হসপিটাল-ম্যান’? এর উত্তরে পার্থবাবু জানান, কেউ তাঁকে চাল-ডাল দিয়ে সাহায্য করেন, অনেকে আবার যে যাঁর সাধ্য মতো টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। কিছু চেনা পরিচিত হোটেল রেস্তোরাঁও রান্না করা খাবার দিয়ে কখনও কখনও সাহায্য করেন তাঁকে।
লকডাউনের সময় থেকে নয়, শহরের পথে অসহায় ভাবে রাত কাটানো রোগীর আত্মীয়রা ‘হসপিটাল-ম্যান’কে পাশে পাচ্ছেন সেই ২০১৬ সাল থেকে। হাতেগোনা কয়েকজনকে দিয়ে শুরু হয় এই মহৎ উদ্যোগ। বর্তমানে প্রায় হাজার খানেক অসহায় রোগীর পরিবারকে যাতে শহরের বুকে অভুক্ত থাকতে না হয়, তার গুরু দায়িত্ব নিয়েছেন পার্থবাবু।
সম্প্রতি সাপ্তাহিক একটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প শুরু করেছেন তিনি। এই ক্যাম্পের সাহায্যে নিজের এলাকায় অন্তত দশজন দুস্থ মানুষকে বিমামূল্যে ডাক্তার দেখানো আর ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। চেষ্টা করছেন এই মানুষগুলির হাতে সাপ্তাহিক রেশন তুলে দেওয়ার। ইচ্ছে থাকলেও অর্থবল ও লোকবলের অভাবে ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এগিয়ে চলার অদম্য সাহসে ভর করে শহরের সবকটি সরকারি হাসপাতালের সামনেই রোগীর পরিজনদের পাশে দাঁড়াতে চান পার্থবাবু।