বিকেলের আড্ডা, চা, মুড়ি-চানাচুর আহ ! স্বর্গীয় স্বাদ। এমন আড্ডা বাঙালির সকলেরই প্রিয়। কিন্তু চানাচুরের প্যাকেট খুলে যদি ভিতরে মেলে কড়কড়ে ছোট মাছ মেলে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এ কিন্তু কষ্ট কল্পনা নয়, রীতিমতো এমন কাজ করে ফেলেছেন বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণভাবে কম জনপ্রিয় কাচকি মাছকে তারা চানাচুরের প্যাকেটে এনে ফেলে বিপ্লব এনে ফেলেছেন। এখন চানাচুর যেখানে যেখানে প্রিয়, সেখানেই চলছে চায়েপে থুড়ি চানাচুর-পে চর্চা।
কাচকি মাছের পুষ্টি চানাচুরের প্যাকেটে
কাচকি মাছ প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। দেশি প্রজাতির কাঁটাযুক্ত, খুব ছোট ও প্রায় স্বচ্ছ একটি মাছ। কাঁচা অবস্থায় কাচের মত দেখতে বলে মাছটিকেস কাচকি মাছ বলে। দুই বাংলাতেই প্রচুর পরিমাণে এই মাছ পাওয়া যায়। আকারে ছোট ও কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা একেবারেই খেতে চায় না। অথচ এত পুষ্টি !
চানাচুর বিপ্লব বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিকল্প উপায়ে পুষ্টি গ্রহণের উপায় উদ্ভাবন করতে গিয়ে চানাচুর বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক। প্রক্রিয়া করে তারা তৈরি করেছেন কাচকি মাছের চানাচুর। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার ও সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক মো. মোবারক হোসেন।
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে কাচকি মাছ
ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কাচকি মাছে শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ। শিশু সহ সকল বয়সের মানুষের চানাচুর জাতীয় খাবার খুব পছন্দের। তাই কাচকি মাছকে প্রসেসড ওয়ে-তে ভেজে চানাচুরের মতোই মুচমুচে করে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মুচমুচে মাছে কাঁটা হাপিশ
সবাই খুশ। কাঁটা আলাদা করার দরকার নেই। মুচমুচে করে মিশিয়ে দেওয়ার কারণে কাঁটা বাছার ঝামেলাও নেই। বুঝতেই পারবেন না, তো বাছার প্রয়োজনও নেই। মোবারক হোসেন বলেন, মুখরোচক খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আমরা মূলত গবেষণাটি করা হয়েছে। ছোট মাছের কাঁটা খেতে হবে চিবিয়ে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে এ কাঁচকি মাছ।
কীভাবে তৈরি হচ্ছে কাচকি মাছের চানাচুর
যেখানে মাছ প্রথমে ভেজে নেওয়া হয়। মাছগুলো মিডিয়াম তাপমাত্রায় ভেজে নিলে, এতে মাছগুলো মচমচে হবে। অন্যদিকে বাজার থেকে কেনা ডাল-চুরণ-পাপড়ি মিশিয়ে প্রক্রিয়াকৃত মাছ মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে চানাচুর। মাছ দিয়ে তৈরি এসব পণ্যে পরবর্তীকালে মাছে কোনও গন্ধ থাকে না। জিপার ব্যাগে পণ্যগুলো দুই মাসের বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে বলে জানা গিয়েছে।
দ্রুত বাজারে আসার প্রস্তুতি
পণ্যগুলোর বাজার মূল্য কত হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষকেরা বলেন, এটা নির্ভর করবে একই পরিমাণ চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে। তবে এমন কিছু দাম হবে না বলেই জানানো হয়েছে। ছোট প্যাকেট ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্য়েই রয়েছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে এই ফরমুলা বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই চলতি পুজো না হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা বাজারে চলে আসবে বলে জানা গিয়েছে।
বিকল্প চাহিদা তৈরি
ফলে কাচকি মাছের বিকল্প বিপণন যেমন শুরু হবে, তেমনই অন্য মাছকেও এমনভাবে প্রক্রিয়ায় অন্য কিছুর সঙ্গে উপাদেয় করে তোলা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি স্বাদের সঙ্গে পুষ্টিও মিলবে।