শ্রীমদ্ভগবত গীতা এমন একটি গ্রন্থ যা মানুষকে সঠিক জীবনযাপনের পথ দেখায়। জীবনে ধর্ম, কর্ম ও প্রেমের পাঠ দেয় গীতা। গীতার জ্ঞান প্রতিটি মানুষের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি। গীতা একটি সম্পূর্ণ জীবনদর্শন। যে ব্যক্তি গীতার জ্ঞান আত্মস্থ করেন তাঁর জীবনে কোনও বাধা আসে না। তিনি যে কোনও পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকেন। প্রতিকূলতা তাঁকে সমস্যায় ফেলে না। গীতার দর্শন এখন গোটা বিশ্বেই সমাদৃত হচ্ছে। সোমবার সেই গীতার দর্শনের খানিকটা রইল পাঠকদের জন্য-
মহাভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুন পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন। ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে যুদ্ধ করবেন! তাঁকে দ্বিধামুক্ত করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই জ্ঞানই রয়েছে গীতায়। শ্রীকৃষ্ণ কর্মের কথা বলেছিলেন অর্জুনকে। কর্মবিমুখ হওয়া সম্ভব নয়। বরং কর্ম দিয়েই মানুষ নিজের ভাগ্য গড়তে পারে। নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ার জন্য কী কী দরকার-
শ্রী কৃষ্ণের অমূল্য শিক্ষা
নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি- অনেকেই যে কোনও কারণে সমস্যায় পড়লে ভাগ্যকে দোষ দেন। বলেন, কপালে নেই। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, কারও ভাগ্য আগাম লেখা থাকে না। ব্যক্তি তাঁর চিন্তাভাবনা, আচরণ ও কর্ম দ্বারাই এগিয়ে যেতে পারেন।
মনকে নিয়ন্ত্রণ- সাফল্যের মূল মন্ত্র মনকে নিয়ন্ত্রণ। শ্রী কৃষ্ণ গীতায় বলেছেন যে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কারণ মনকে নিয়ন্ত্রণ করে না করলে তা শত্রুর মতো আচরণ করে।
নিজের উপর ভরসা- সবসময় আত্মবিশ্বাসী থাকা উচিত। আর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা দরকার। কারণ সময়ের চেয়ে বলবান কেউ নেই। ভেঙে পড়লে চলবে না। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে কর্ম করে চলতে হবে। শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন যে একজন ব্যক্তির বর্তমানকে দেখে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ঠাট্টা করা উচিত নয়। কারণ সময়ের এত শক্তি যে তা ধীরে ধীরে কয়লাকে হিরেতে পরিণত করে।
অহং ত্যাগ- শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে ভক্ত নিজেকে সমর্পণ করেন তিনি তাঁকে কখনও বিফল হতে দেন না। খালি তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আর অহংকারকে পরিহার করতে হবে। গীতায় বলা হয়েছে, এ দেহ তোমার নয়, তুমিও এই দেহের নও। এই দেহ আগুন, জল, বায়ু, পৃথিবী এবং আকাশ দিয়ে তৈরি। শেষ পর্যন্ত পঞ্চভূতে মিশে যাবে। কিন্তু আত্মা অমর। তাহলে আমি কে? ঈশ্বর বলেন, হে মানুষ! তুমি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর। এটাই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। যিনি তা করতে পারেন তিনি চিরকাল ভয়, উদ্বেগ ও দুঃখ থেকে মুক্ত হন।
কেউ কে়ড়ে নিতে পারবে- কর্মের ফল কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সঠিক কর্ম হলে উন্নতি নিশ্চিত। যা আপনার প্রাপ্য তাই-ই পাবেন।