শ্রীমদ্ভগবত গীতা হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ। কুরুক্ষেত্রে মহাভারতের যুদ্ধের সময় অর্জুনকে গীতার বাণী শোনান শ্রী কৃষ্ণ। ভক্তি যোগ, কর্ম যোগ, একেশ্বরবাদ, জ্ঞান যোগ শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বর্ণিত হয়েছে। মানবজীবন সম্পর্কিত বহু সমস্যার সমাধানও রয়েছে গীতায়। তেমনই গীতায় বলা হয়েছে, জীবনে উন্নতি ও সাফল্য পেতে গেলে ৪ জিনিস থেকে থাকতে হবে দূরে।
মানুষের জীবনে যখন কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তখন সমাধান না করে সে পালাতে থাকে। ঠিক যেমন মহাভারতের যুদ্ধের সময় প্রিয়জন হারানোর ভয়ে অর্জুন খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কখনও কখনও আমরা জীবনের নানা সমস্যায় বিভ্রান্ত হই। এমন পরিস্থিতিতে ভাগবত গীতা পথ দেখাতে পারে। গীতার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ মানুষকে সুখী জীবনযাপনের নানা উপায় বলেছেন। একইভাবে তিনি এমন চারটি বিষয়ের কথা বলেছেন যা মানুষের কখনও কামনা করা উচিত নয়। এ কারণে তাঁকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
গীতার শ্লোক
'পরান্ন চ পরদ্রব্য তথৈব চ প্রতিগ্রহম। পরস্ত্রী পরনিন্দা চ মনসা অপি বিবর্জয়েত।'
অর্থ:-কখনও অন্যের খাবার, অন্যের অর্থ, অন্যের দান, অন্যের নারী এবং অন্যের নিন্দা করবেন না।
পরের খাবার- শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে কোনও ব্যক্তি যদি নিজের বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের পেট ভরানো উচিত কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ দিয়েই। নিজের ও পরিবাবের জন্য খাবার নিজের টাকা দিয়ে কেনা উচিত। নিজেকে অন্যের খাবারের হকদার মনে করো না। কারণ সেই খাবারও পাওয়া যায় কারও পরিশ্রমে। অপরের খাবারের ইচ্ছা থাকলে নিজের স্বাস্থ্যের উপর সুপ্রভাব পড়ে না।
অপরের অর্থ- অন্যের টাকা কখনও নিজের মনে করবেন না। আপনি যদি প্রতারণা করে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে তার থেকে বহুগুণ বেশি দিতে হতে পারে। অথচ এই অর্থ স্বাস্থ্য,শিক্ষা বা অন্য কোনওভাবে ব্যয় করা যেতে পারে।
দান- হিন্দু ধর্মে দাতব্যের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দান করলে পুণ্য লাভ হয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, দান করার ইচ্ছা থাকলে উপার্জিত অর্থ থেকেই দান করা উচিত। অন্য কারও জিনিস থেকে দান করলে এক শতাংশ পুণ্যও মেলে না।
পরের স্ত্রী বা অপরিচিত নারী- অপরিচিত নারীর প্রতি কামনা পোষণ করাকে মহাপাপ মনে করা হয়। ঠিক যেমন আপনি রসুন বা পেঁয়াজ খেয়ে গন্ধ লুকোতে পারবেন না, একইভাবে আপনি যদি অপরিচিত মহিলার সঙ্গ কামনা করেন তবে গোপনে তা করতে পারবেন না। মন এবং আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। মন নারীর কামনায় প্রবাহিত হলে নিন্দা তো হয়ই, কোনও জায়গাতেই সাফল্য মেলে না। সাফল্য পেতে গেলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
নিন্দামন্দ- শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অন্যের সমালোচনা করা উচিত নয়। কেবল অন্যদের নয়, নিজের ক্ষতি করে নিন্দা। যে কোনও মানুষকে ধ্বংস করে। যে ব্যক্তি সর্বদা অন্যের নিন্দা করেন তাঁকে কেউ ভরসা করে না। তাঁর প্রতি কারও বন্ধুত্ব বা সহমর্মিতা থাকে না।