শখের চড়া মাশুল দিতে হল তরুণীকে। প্রিয় তারকার হেয়ার কালারের সঙ্গে ম্যাচ করে চুলে রং করতে গদিয়েছিলেন ২০ বছরের এক তরুণী। ফল হল মারাত্মক। চুলে রং করানোর পর থেকেই কিডনির গুরুতর প্রদাহে ভুগতে শুরু করেন তিনি। তাঁর পায়ে লাল লাল ছোপ পড়ে যায়। সঙ্গে গাটে গাঁটে অসহ্য যন্ত্রণা ও পেটে ব্যথা।
চিনের বাসিন্দা ও তরুণীকে ঝাংঝৌ পিপলস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর কিডনির অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালের চিকিৎসক তাও চেনইয়াং জানিয়েছেন, মেয়েটির প্রিয় তারকা যে রং করিয়েছিলেন, তিনিও তাঁকে অনুসরণ করে একই হেয়ার কালার করাতে পার্লারে গিয়েছিলেন। যাতে ঘটল বিপত্তি।
অনেকেরই ধারণা কে -পপ মিউজিক এবং লাইফস্টাইলের প্রভাবেই মেয়েটির সঙ্গে এমনটা ঘটে থাকতে পারে। চিকিৎসক সতর্ক করে বলেন, 'অনেক হেয়ার ডাই-তে সিসা ও পারদের তো বিষাক্ত পদার্থ থাকে। যা কিডনির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অল্পবয়সীদের মধ্যে যারা ঘন ঘন চুল রাঙায় তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের রাসায়নিক আরও দ্রুত এবং বেশি প্রভাব ফেলে।'
চিনের ওই তরুণীর খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে নেটিজেনরা উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। কেউ বলেন, 'নিজের স্বাস্থ্য খারাপ করে কোনও তারকাকেই অনুসরণ করা উচিত নয়।' আবার কেউ বলছেন, 'তারকাকে নকল করতে গিয়ে তরুণীকে নিশ্চয়ই ব্লিচ এবং ডাই দুই ব্যবহার করতে হয়েছে। এগুলি সাধারণ রঙের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর।'
প্রসঙ্গত, ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, পার্মানেন্ট হেয়ার ডাইয়ের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার মূত্রাশয়ের ক্যানসারের (ব্লাডার ক্যানসার) ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর কারণ হিসাবে অ্যারোম্যাটিক অ্যামাইনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী যৌগের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে। আবার ‘টক্সিকোলজি রিপোর্টস’ (২০২১)-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, সিসা ও পারদের মতো ভারী ধাতুযুক্ত হেয়ার ডাইয়ের ঘন ঘন ব্যবহার লিভার, কিডনির ক্ষতি করার পাশাপাশি শরীরের হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট করে দিতে পারে।
কেবলমাত্র চিনের এই তরুণী নন, ২০২৩ সালে ব্লাডার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর ল’রিয়াল-সহ ১১টি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এক মার্কিনি মহিলা। তিনি বলেন, 'আমার চিকিৎসক আমার পেশা সম্পর্কে জানতে চান। আমি হেয়ারড্রেসার, একথা বলতেই তিনি সবটা বুঝে যান।' অভিযোগ করা হয়, গবেষণা ও সুরক্ষা পরীক্ষায় প্রসাধনী সংস্থাগুলির গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
ফলে অধিকাংশ চিকিৎসকই জানান, খুব ঘন ঘন চুল রঙ করা উচিত নয়। ব্যবহারের আগে উপাদানগুলি অবশ্যই পরখ করে দেখে নেওয়া উচিত। রং করার সময়ে গ্লাভস পরা আবশ্যক।