
রাজমা কিডনি বিনস নামেও পরিচিত। ভারতস-হ বিশ্বের অধিকাংশ স্থানে রাজমা খুব জনপ্রিয়। রাজমা যেমন ভারতে খুব পছন্দ করা হয়, তেমনি এটি মেক্সিকান খাবারেও বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। অনেকের প্রিয় সবজির মধ্যে একটি হল রাজমা। কিডনি বিনে ক্যালরির পরিমাণও খুব কম, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। রাজমা প্রোটিনের একটি নিরামিষ উৎস।
একথা অস্বীকার করা যায় না যে, বেশিরভাগ মানুষই রাজমা খায় শুধুমাত্র স্বাদের জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য নয়। কিডনি বিন খাওয়ার সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো এটি শরীরের কোনো বিশেষ অংশেরই উপকার করে না, এটি পুরো শরীরকে পুষ্টি জোগায়। রাজমায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম এবং অনেক পুষ্টি উপাদান। শুধু তাই নয়, এতে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। কিডনি বিনে ক্যালরির পরিমাণও খুব কম, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে রাজমা খাওয়ার উপকারিতা জেনে আপনিও অবাক হতে পারেন :
শক্তির একটি খুব ভাল মাধ্যম
রাজমাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যার কারণে এটি শক্তি দিতে কাজ করে। শরীরের বিপাক এবং শক্তির জন্য আয়রনের প্রয়োজন, যা রাজমা খেলে পূরণ হয় । এর পাশাপাশি এটি শরীরে অক্সিজেনের সঞ্চালনও বাড়ায়।
সঠিক পরিমাণ ক্যালোরি
প্রতিটি বয়সের জন্য রাজমায় উপস্থিত ক্যালরির পরিমাণ সঠিক। আপনি চাইলে তরকারি ছাড়াও সালাড ও স্যুপ আকারেও খেতে পারেন। যারা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের জন্য দুপুরের খাবারে রাজমা সালাড ও স্যুপ খাওয়া উপকারী হবে।
হজমের ক্ষেত্রে
রাজমায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা সঠিক হজমশক্তি বজায় রাখে। এর পাশাপাশি এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
মস্তিষ্কের জন্য কার্যকর
রাজমা খেলে মস্তিষ্কের অনেক উপকার হয়। এতে ভিটামিন ‘কে’ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। যা স্নায়ুতন্ত্রকে চাঙ্গা করতে কাজ করে। এছাড়া এটি ভিটামিন ‘বি’-এরও ভালো উৎস, যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্রেনকে পুষ্ট করতেও কাজ করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে
রাজমায় উচ্চ পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় । এর পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ হার্ট সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সহায়ক।
স্থূলতা
ডায়েটে কিডনি বিন অন্তর্ভুক্ত করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনি যদি ওজন বাড়ার সমস্যায় অস্থির থাকেন, তাহলে রাজমা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কারণ কিডনি বিনে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হাড়
আপনি যদি দুর্বল হাড়ের সমস্যায় উদ্বিগ্ন হন, তাহলে ডায়েটে কিডনি বিন অন্তর্ভুক্ত করুন। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রাজমায় পাওয়া যায়, যা হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
কোলেস্টেরল
রাজমায় ম্যাগনেসিয়াম ভালো পরিমাণে পাওয়া যায়। যা হার্টের স্বাস্থ্য ও হাড়ের জন্য উপকারী। কিডনি বিন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ভালো কোলেস্টেরল তৈরিতেও কিডনি বিন সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস
রাজমা খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কিডনি বিনে দ্রবণীয় ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ইমিউনিটি শক্তিশালী করার জন্য আপনি ডায়েটে রাজমা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, কারণ ভিটামিন, জিঙ্ক, আয়রন, ফলিক এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো উপাদান এতে তে পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র
রাজমা স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। রাজমা খেলে মস্তিষ্কের অনেক উপকার হয়। এতে ভিটামিন 'কে' এবং ভিটামিন 'বি' পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, যা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ত্বক
রাজমা খাওয়া ত্বকের জন্যও উপকারী বলে মনে করা হয়। কিডনি বিনে পাওয়া ভিটামিন-সি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বক ও চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
রাজমা খাওয়ার সঠিক সময়
রাজমা খাওয়ার সময় একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে, যে কোনো ঋতুতে রাতে এটি খাবেন না। সব সময় দুপুরের খাবারের সময় রাজমা খান। এর কারণ হল, রাজমা একটি ভারী খাবার, যা হজম করতে পাকস্থলীকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। রাতের খাবারে রাজমা খেলে পেটে ভারী হওয়া, গ্যাস তৈরি হওয়া, ঘুমের অভাব, সকালে পেট ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়া, পেটে ব্যথা, পরের দিন খুব অলস বোধ করা ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে হতে পারে।