ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডস মহিলাদের গর্ভ ধারণের জন্য খুবই জরুরি এক শারীরিক প্রক্রিয়া। মেয়েদের প্রত্যেক মাসেই এই ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। এই সময়কালে মেয়েদের তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ব্লিডিং হয়ে থাকে। এই সময় অধিকাংশ মেয়েদের পেটে ও কোমরে ব্যথা হযে থাকে। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিছু মহিলাদের জন্য এই ব্যথা খুব একটা সমস্যা করে না, তবে অনেকেই রয়েছেন যাঁদের ঋতুস্রাবের সময় পেটে অত্যাধিক ব্যথা হয়ে থাকে। যা বেশ চিন্তার কারণ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
পিরিয়ডে হয় অসহনীয় পেটে ব্যথা
সাধারণত পিরিয়ডসের সময় তিন থেকে সাতদিন হয়ে থাকে। কিছু মহিলাদের জন্য এটা খুবই সামান্য বিষয় হলেও অনেকের এই পিরিয়ডের জন্য অসহনীয় পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। আর এটা আরও চিন্তার বিষয় তখন হয় যখন এই পিরিয়ড সাতদিনের বেশি থাকে। এটা এভাবে বলা যেতে পারে যে মহিলাদের জরায়ু এই সময় সম্ভাব্য গর্ভ ধারণের জন্য নিজেরে প্রস্তুত করার জন্য পুরু হয়ে যায় এবং যখন গর্ভধারণ হয় না তখন এটা পিরিয়ডসের সময় মহিলাদের জরায়ু থেকে রক্তের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
গর্ভপাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে শরীর
মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার অর্থই হল তাদের শরীর সম্ভাব্য গর্ভধারণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। সাধারণ পিরিয়ডের ব্লিডিং তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত থাকে। কিন্তু যদি এই পিরিয়ড দীর্ঘ সময় পর্যন্ত থাকে তাহলে কখনই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবেন না।
আরও পড়ুন: Period hygiene: ৪ ঘণ্টার বেশি পরে থাকেন স্যানিটারি ন্যাপকিন? কতবার প্যাড বদলানো জরুরি জানুন
সাতদিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড হলে
ঋতুস্রাবের যখন কথা হয় তখন এর পিছনে কিছু কারণ কাজ করে। অনেক সময় আপনার পিরিয়ড কম থেকে বেশিদিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তন হয়।
বেশিদিন যদি পিরিয়ড হয়
কিশোরীদের পিরিয়ডের গণ্ডগোল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যেটা তাদের হরমনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে। এর কারণে অনেক দিন পর্যন্ত পিরিয়ড হতে পারে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির শুরুতে পিরিয়ডগুলো অনেক দীর্ঘ হয়। অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ফাইব্রয়েড এবং অ্যাডেনোমাসের মতো গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত রোগের কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঋতুস্রাবের গণ্ডগোল মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায় যেমন একটোপিক টিউবাল প্রেগন্যান্সি (যেখানে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে ইমপ্লান্ট হয় এবং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে না) বা গর্ভপাতের মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ়্দের মতে, যদি মহিলাদের পিরিয়ড সাতের বেশি চলে তবে সেখানে অনেক রক্ত জমাট দেখা দেয়। সেটাকে কখনও এড়িয়ে চলা উচিত নয়। মেয়েদের এইদিকেও নজর রাখতে হবে যে তাঁদের পিরিয়ডের রঙ কেমন।
আরও পড়ুন: Menstrual Period: পিরিয়ডের সময় বারবার ওষুধ খাওয়া কি ঠিক? জেনে নিন এর সাইডএফেক্ট
কারণ রয়েছে একাধিক
যদি কোনও মহিলার ২০ দিন পর্যন্ত ব্লিডিং চলে তবে এটা কোনওভাবেই সাধারণ বিষয় নয়। এই ধরনের পরিস্থিতিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। চিকিৎসকদের মতে, ২০ দিন ধরে চলা পিরিয়ডের পিছনে কিছু প্রধান কারণ থাকতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
মহিলাদের মধ্যে প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে, পিরিয়ড ২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
ফাইব্রয়েডস
ফ্রাইব্রয়েড একটি রোগ যেখানে জরায়ুর আকার বেড়ে যায়। এটি জরায়ুতে হালকা টিউমারের মতো হয়ে থাকে যা মহিলাদের জন্য খুব সাধারণ একটি রোগ। কিন্তু এটাই পিরিয়ডের সময় অসহনীয় বেদনা, ব্যথা, অত্যাধিক ব্লিডিং, সহবাসের সময় ব্যথা ও পীঠ ও কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এর ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকতে পারে আর এটার ফলে প্রজনন ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: Papaya Seeds Benefits : মেদ ঝরায়-পিরিয়ডের ব্যথা কমায়, পেঁপের বীজের বহু গুণ
ক্যানসার
পিরিয়ডের সময় অত্যাধিক ব্লিডিং জরায়ু বা জরায়ুর মধ্যে ক্যানসার বৃদ্ধির কারণে হতে পারে।
পলিপ্স
পলিপ্স হল জরায়ুর ভেতরে হওয়া এক ধরনের টিউমার যা এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ) কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এগুলি গঠিত হয়। জরায়ু পলিপ্সগুলি এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপ্স নামেও পরিচিত। এই পলিপ্সগুলি সাধারণত ক্যান্সারবিহীন তবে অনেকগুলি ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
গর্ভনিরোধক
পিরিয়ডের গণ্ডগোল ইন্ট্রা ইউটাইন ডিভাইস-এর কারণে হতে পারে। এটি একটি ছোট গর্ভনিরোধক উপকরণ, যেটাকে আপনার জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অবাঞ্ছিত গর্ভ ধারণ রোধ করার জন্য। তবে ভুলভাবে যদি এর ব্যবহার করা হয় তবে অত্যাধিক ব্লিডিং হতে পারে।
গর্ভনিরোধক ওষুধ
রক্ত পাতলা করে এমন অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। গর্ভ নিরোধক ওষুধ ভুলভাবে সেবন করলে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন মহিলারা।
পেলভিক ইনফেকশন
পেলভিক সংক্রমণের কারণেও মহিলাদের দীর্ঘ সময় ও অত্যাধিক ব্লিডিং হতে পারে। এই সময় মহিলারা পেটে অত্যাধিক ব্যথা অনুভূত হয়।
এই সমস্যার চিকিৎসা
ঋতুস্রাবের যে কোনও সমস্যার চিকিৎসা নির্ভর করে তার কারণের ওপর। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ ও অত্যাধিক রক্তপাত বা ব্যথার জন্য আপনাকে কিছু ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু এটা যদি ক্রমাগত হয়ে থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।