
History of Hemophilia: রানি ভিক্টোরিয়া (Queen Victoria) ছিলেন ব্রিটেনের রানি। তিনি তাঁর শাসনকালে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ শাসন করেছেন। রানি ভিক্টোরিয়ার সময় (১৮৩৭-১৯০১) ব্রিটেন বিশ্বের সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রক রাজশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। তবে এগুলি ছাড়াও রানি ভিক্টোরিয়া আরও একটি বিশেষ কারণে পরিচিত, তা হল রক্তের একটি বিরল, মারণ রোগ হিমোফিলিয়া (Hemophilia)। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, রানি ভিক্টোরিয়াই এই রোগের প্রথম শিকার হন, তারপরে এই রোগটি রাজ পরিবারের আরও অনেকের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। তাই এই রোগটিকে রাজ-রোগও বলা হতো। চলুন এই রাজকীয় রোগ সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
হিমোফিলিয়া (Hemophilia) কী?
হিমোফিলিয়া একটি বংশগত বিরল রক্তক্ষরণের ব্যাধি। এই রোগে আক্রান্তদের রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না। যার ফলে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য আঘাতের পরে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তপাত বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ব্রিটেনের রাজপরিবারের হিমোফিলিয়ার (Hemophilia) যোগ:
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া হিমোফিলিয়ায় (Hemophilia) ভুগেছিলেন। এই রোগ সম্পর্কে প্রথম জানা যায় যখন ব্রিটেনের রাজপরিবারের একের পর এক সদস্য ধীরে ধীরে এই রোগের শিকার হতে থাকে। ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার পর ব্রিটেনের রাজপরিবারের অনেক সদস্যই হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হন এবং এই রোগেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
রানি ভিক্টোরিয়া (Queen Victoria) ছাড়াও তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলেও হিমোফিলিয়ায় (Hemophilia) আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই রোগের ফলে ভিক্টোরিয়ার ছেলে প্রিন্স লিওপোল্ডের মৃত্যু ঘটে। একটি দুর্ঘটনার পর প্রিন্স লিওপোল্ডের রক্তপাত বন্ধ করা কঠিন করে তোলে এই রোগ। তখন যুবরাজের বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। পরবর্তীতে, রানি ভিক্টোরিয়ার দুই মেয়ে যখন বিভিন্ন দেশের রাজাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন এই রোগটি বংশগতভাবে বিভিন্ন দেশের রাজপরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অনেক দেশেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জন্ম নেওয়া প্রতি ২৫,০০০ জনের মধ্যে ১ জন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ:
১) ঘন ঘন নাক দিয়ে রক্ত পড়া,
২) মাড়ি থেকে অকারণে রক্তপাত,
৩) সহজেই ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে খোসা ওঠা,
৪) অভ্যন্তরীণ রক্তপাত,
৫) শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থলে, পেশিতে ব্যথা,
৬) মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত,
৭) হিমোফিলিয়ার কারণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথার ভেতরে রক্তপাত হতে পারে।
হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা কী?
হিমোফিলিয়া চিকিৎসার অনেক উপায় আছে। যেমন,-ক্লটিং ফ্যাক্টর, অ্যামিনোক্যাপ্রোইক অ্যাসিড, নন-ফ্যাক্টর প্রতিস্থাপন থেরাপি, ওষুধ-পথ্য এবং ব্যাথা থেকে মুক্তির একাধিক থেরাপির সাহায্যে এর চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিস্থাপন থেরাপি (replacement therapy) মূলত দুই প্রকার:
প্রফিল্যাকটিক থেরাপি (Prophylactic therapy): রক্তপাত রোধ করার জন্য কিছু রোগীর নিয়মিত প্রতিস্থাপন থেরাপির প্রয়োজন হবে। একে বলা হয় প্রফিল্যাকটিক থেরাপি। চিকিৎসকরা সাধারণত হিমোফিলিয়ায় গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত এই ধরনের চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
ডিমান্ড থেরাপি (Demand therapy): এই থেরাপি চাহিদা অনুযায়ী রক্তপাত বন্ধ করবে। হালকা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই এই ডিমান্ড থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। এটি এমন একটি চিকিৎসা যা ডাক্তাররা শুধুমাত্র রক্তপাত শুরু হওয়ার পরে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে করে থাকেন।