শরীরের কোষ এবং গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ হল হরমোন। যা শরীরের অন্যান্য সব অংশে থাকা কোষকে প্রভাবিত করে। হরমোন বিপাক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রজনন, শরীরের বিকাশ এবং মেজাজের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে হরমোনের মাত্রাও পরিবর্তন হতে থাকে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে হরমোনের মাত্রায় বেশি হেরফের হয়। গর্ভাবস্থা ও ঋতুকালে বেশি হরমোন প্রভাব ফেলে। হরমোনের ভারসাম্য হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা পিসিওএস, হাইপোথাইরয়েডিজম,হাইপারথাইরয়েডিজম, ত্বকের সমস্যা এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়। হরমোনের সামান্য পরিবর্তন হলে শরীরে এই লক্ষণগুলি দ্রুত প্রকাশ পায়। খিদে কমা, ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের পরিবর্তনের জন্য দায়ী। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে শরীরে হরমোন কম বা বেশি উৎপন্ন হয়। শরীরে কয়েকটি লক্ষণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ দেখলেই খাবারে কিছু পরিবর্তন করা দরকার। তাহলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যার সমাধান হতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি
- কোমরে উপরে অত্যাধিক চর্বি
- অধিকাংশ সময় ক্লান্তি বোধ করা
- নিদ্রাহীনতা
- গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের সঙ্গে অস্বস্তি
- মানসিক চাপ এবং ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন
- অতিরিক্ত ঘাম এবং যৌন ইচ্ছা কমা
- ত্বকের সমস্যা, মুখে ব্রণ
- অসময়ে চুল পাকা
- ঘনঘন তেষ্টা পাওয়া
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগা
আরও পড়ুন- লিভার খারাপের এই ৬ লক্ষণ দেখা দেয় মুখেই, সতর্ক না হলে বিপদ
গরমে হরমোনের ভারসাম্য রাখতে চাইলে এই ৫ খাবার এড়িয়ে চলুন
সয়া-গরমকালে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এড়াতে সয়া খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সয়ায় ফাইটোয়েস্ট্রোজেন নামক একটি প্রধান জৈব পদার্থ রয়েছে যা শরীরের ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। সয়া দিয়ে তৈরি টফু, সয়া দুধ এবং সয়া সস রয়েছে। এই খাবারগুলি শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতাকে আরও অবনতি করতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবার- দুগ্ধজাত খাবার হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ। দুধ এবং দুগ্ধজাত পদার্থ পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। হরমোনকে ভারসাম্যহীন করে। দুধের অত্যাধিক ব্যবহার ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা সুগার বাড়ায়।
অতিরিক্ত মিষ্টি- কৃত্রিম সুইটনার হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। অন্ত্রের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে। খিদে বাড়িয়ে দেয়। ফলে বৃদ্ধি পেতে পারে ওজন। চিনিও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে।
প্রসেসড খাবার- যে কোনও ধরনের প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন। রক্তে শর্করা বাড়ায় এই ধরনের খাবার। এই ধরনের খাবার অতিরিক্ত খেলে হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়।
বিশেষ কয়েকটি সবজি- হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী কয়েকটি সবজিও। যেমন- বেগুন, কাঁচা লঙ্কা, আলু এবং টমেটো। এগুলি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। রেড মিট হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ একটি খাবার। তাই এটি খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি প্যাকেট মাংস খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন। অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়াতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। রেড মিটের পরিবর্তে ডিম এবং ফ্যাটযুক্ত মাছ খান।
হরমোন নিয়ন্ত্রণে কী খাবেন?
তিসি-তিসির বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বাদাম- বাদাম এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে প্রভাব ফেলে। যা কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।
ছোলা- ছোলায় ভিটামিন বি, ভিটামিন বি৬, ফোলেটের মতো পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। যা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। ছোলা খেলে শরীরে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়।
আপেল- আপেল কোয়েরসেটিন সমৃদ্ধ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমায়। এই ফলটি শুধুমাত্র উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে না বরং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। ভাইরাল সংক্রমণকে দূরে রাখে। ওজন কমাতেও কার্যকর আপেল। এতে ক্যালোরি কম। আপেল ফাইবার সমৃদ্ধ।
অ্যাভোকাডো- অ্যাভোকাডো হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি এবং খনিজ রয়েছে যা উচ্চ পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে অ্যাভোকাডো।