মানবশরীর চালিত হয় নানা ধরনের হরমোনে। স্বাভাবিক জীবনের জন্য দরকার এই হরমোনগুলির। তা শারীরিক, মানসিক ও আবেগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হরমোনকে বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে রাসায়নিক বার্তাপ্রেরকও বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের হরমোনের মাত্রায় তারতম্য থাকে। আর হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। কিন্তু হরমোনজনিত সমস্যা কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব হয় না! তাহলে কী করবেন? একেবারেই যে অসম্ভব তা নয়, কয়েকটি লক্ষণেই বুঝতে পারবেন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়েছে কিনা।
হরমোন হল রাসায়নিক বার্তাপ্রেরক। যা বিভিন্ন কাজের জন্য সরাসরি রক্তের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গ ও কোষের সঙ্গে তালমিল রক্ষা করে। ঘুম, হজম, মেজাজ এবং মহিলাদের মাসিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হরমোন। গর্ভাবস্থা, পিরিয়ড বা মেনোপজের আগে জীবনের বিভিন্ন ধাপ পর্যন্ত শরীরে হরমোনের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। কিছু ওষুধ, চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য সমস্যাও শরীরের হরমোনকে প্রভাবিত করে।
হরমোন ডিসঅর্ডারের লক্ষণ
মেজাজ পরিবর্তন, ঘুমের ধরণে বদল (অনিদ্রা), দুর্বল স্মৃতিশক্তি, সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ, মাথাব্যথা এবং হজমের সমস্যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া পেশী সম্পর্কিত সমস্যাগুলিও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে ওঠে। বাড়ে বদহজম। অত্যধিক চাপ, খারাপ ঘুম, প্রক্রিয়াজাত বা মিষ্টি খেলে ইমফ্লেমেশন বা প্রদাহ বাড়ে শরীরে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দাওয়াই সুস্থ জীবনযাপন। সুষম আহার, পর্যাপ্ত ঘুম ও খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে হরমোন ঠিকঠাক থাকে। সূর্যোদয়ের পর নীল আলো সম্পূর্ণ বন্ধ রাখুন। এতে শরীরে ইমফ্লেমেশন কমিয়ে দিতে সক্ষম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলাটোনিন তৈরি হয়। এছাড়াও ভাল ঘুম দরকার। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ধ্যান করতে পারেন। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর জল খান।
ডায়েটে কী রাখবেন?
- খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রঙের ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন। পুষ্টিকর রঙিন খাবার গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আপেল, স্ট্রবেরি, চেরি, কালো জাম, পেয়ারা এবং তরমুজ, কমলা লেবু,অ্যাভোকাডো, বাঁধাকপি এবং ব্রকলি ইত্যাদি খান।
- শরীরে ফ্যাটও দরকার। ঘিয়ে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে২। এছাড়া অ্যাভোকাডো তেলও ব্যবহার করতে পারেন। বাদাম, আখরোটও খান।
-ডিমের কুসুমে থাকে এ, ডি, ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং সেলেনিয়াম-সহ বেশ কয়েকটি ভিটামিন। এই ভিটামিন এবং খনিজগুলি প্রাকৃতিকভাবে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হজমের সমস্যা থাকলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা লক্ষ করা যায়। প্রোবায়োটিকস খেলে উপকার হতে পারে। ডায়েটে রাখুন দই, বাটারমিল্ক এবং ভাতের ফ্যান।
- চিনি খাওয়া কম করুন। চিনি হরমোনের কার্যকারিতার উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। চিনি খেলে ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন এবং নানা রোগ হতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য, তুলসি এবং ভেষজ চা পান করতে পারেন। এই পানীয় স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন- ৫৩ বছরেও সিক্স প্যাকস! ডায়েটে এই ৩ জিনিস রাখেন 'সুপারফিট ঠাকুমা'