প্রতীকী ছবিমানবজাতির ভবিষ্যৎ কি পুরোপুরি বদলে যেতে চলেছে? উন্নত প্রযুক্তির দৌলতে ‘ডিজাইনার শিশু’ তৈরির বাস্তব সম্ভাবনা এখন সামনে এসেছে। ‘প্রিভেন্টিভ’ নামে এক গোপন সংস্থা, বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সমর্থনে, মানব ভ্রূণের জিন পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে, যা বিজ্ঞানজগতে যেমন উত্তেজনা তৈরি করেছে, তেমনই নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নও ছুড়ে দিচ্ছে।
জিন পরিবর্তনের গোপন উদ্যোগ
প্রিভেন্টিভ সংস্থাটি ওপেনএআই-এর প্রধান স্যাম অল্টম্যান এবং কয়েনবেস-এর ব্রায়ান আর্মস্ট্রং-এর মতো টেক-বিলিয়নেয়ারদের আর্থিক সহায়তায় মানব ভ্রূণের জেনেটিক পরিবর্তনের পরীক্ষা চালাচ্ছে। ডিম্বাণু, শুক্রাণু বা ভ্রূণের ডিএনএ-তে CRISPR প্রযুক্তির মাধ্যমে কাটাছেঁড়া করে বংশগত রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করাই তাদের লক্ষ্য।
এটি সফল হলে সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো বহু গুরুতর ও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রোগের অবসান ঘটতে পারে। তবে এর প্রভাব শুধু নতুন শিশুতে নয়-পরবর্তী প্রজন্মের ডিএনএ-তেও স্থায়ীভাবে পৌঁছে যাবে।
আইন ও নৈতিকতা: বিপজ্জনক সীমারেখা
আমেরিকার বেসরকারি ল্যাবে এই পদ্ধতি বৈধ হলেও, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন-একটিমাত্র ভুল কাটও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে নতুন রোগ তৈরি করতে পারে। জিন ভুল জায়গায় কাটা হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিপুলভাবে বেড়ে যেতে পারে।
একইসঙ্গে উঠে আসছে বড় সামাজিক প্রশ্ন
'ডিজাইনার বেবি' কি শুধু ধনীদের জন্য বিলাসবহুল বাস্তবতা হয়ে উঠবে?
যেখানে ধনীরা সন্তানদের ইচ্ছেমতো ‘নিখুঁত’ করতে পারবে, আর সাধারণ মানুষ পুরনো সমস্যার মধ্যেই আটকে থাকবে?
অতীতের বিতর্ক নতুন করে সামনে
২০১৮ সালে চিনে বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই জিন-সম্পাদিত যমজ কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন, যার জন্য তাঁকে জেলও খাটতে হয়। সেই ঘটনার পর বিশ্বের চোখে জিন-এডিটিং একটি বিপজ্জনক সীমারেখায় পৌঁছায়। এখন পশ্চিমা দেশগুলিতেও নতুন উদ্যোগ দেখে বিশেষজ্ঞ সমাজ উদ্বেগে।
ডিজাইনার শিশুর যুগ কি সামনে?
বিশ্বের বহু সংস্থা ইতিমধ্যেই ভ্রূণের লিঙ্গ, চোখের রঙ, উচ্চতা, এমনকি আইকিউ পর্যন্ত স্ক্রিনিং করে থাকে। ফলে ‘ডিজাইনার বেবি’ আর কল্পকাহিনি নয়-ধীরে ধীরে বাস্তবের পথে হাঁটছে।
বিলিয়নেয়ারদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা: কতদূর যাবে?
টেক-বিলিয়নেয়ারদের মধ্যে দীর্ঘায়ু, পারফেক্ট স্বাস্থ্য এবং ‘উন্নত মানবজাতি’ তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। স্যাম অল্টম্যানরা জিন-এডিটিংকে এআই-এর সঙ্গে মিশিয়ে ‘মানব উন্নয়ন’-এর ভবিষ্যৎ কল্পনা করছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, ঠিক কতটা পরিবর্তন চায় তাঁরা? রোগ নির্মূল? নাকি সুপার-হিউম্যান তৈরির স্বপ্ন?
নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর নিয়ম, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ, এবং বৃহৎ ক্লিনিকাল ট্রায়াল ছাড়া এই প্রযুক্তি সমাজের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই নজরদারি বাড়াচ্ছে।