আসল বা নকল ডিম চেনার উপায় সিদ্ধ, ভাজা, পোচ, হাফ বয়েল কিংবা রকমারি পদ, ডিম অনেকেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকে। বলা যায়, ডিম পছন্দ করেন না এরকম মানুষ খুব কমই আছে। এটি রান্না করা যেমন সহজ, তেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডিম শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বেশিরভাগ মানুষই তাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটটি পূরণ করতে ডিম খান। কিন্তু ভাবুন তো, যদি আপনাকে সুস্থ রাখার পরিবর্তে, ডিম খেলে ক্ষতি হয়?
পুরনো বা নষ্ট ডিম পেটের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। এর ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া, বমি, ডায়েরিয়া, জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ দিক হল, কখনও কখনও আমরা বুঝতেও পারি না যে ডিমটি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায়শই, আমরা ফ্রিজে সংরক্ষিত ডিম রেখে, ধরে নিই যে সেগুলি ভাল আছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়ই ব্যাকটেরিয়া (যেমন সালমোনেলা) ডিমের উপর জন্মায় এবং খেলে শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া বাজারে প্রচুর ভেজাল ডিম পাওয়া যায়। ডিম খাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তা কীভাবে বোঝা যায় তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিন, কীভাবে বুঝবেন ডিম ভাল না খারাপ।
FSSAI জানিয়েছে কীভাবে শনাক্ত করবেন
ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) ডিমের গুণমান পরীক্ষা করার জন্য কিছু নিয়ম দিয়েছে, যা অনুসরণ করে আপনি ঘরে বসেই ডিমের গুণমান সহজেই পরীক্ষা করতে পারবেন।
জলে ভাসা ডিম ভাল না খারাপ?
* এবিষয়ে এফএসএসএআই একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে ডিম না ভেঙেই তা পরীক্ষা করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর জন্য একটি গ্লাসে পরিষ্কার জল ভরে ডিমটি তার মধ্যে রাখুন। যদি ডিমটি গ্লাসের নিচে চলে যায়, তবে বুঝতে হবে এটি তাজা এবং খাওয়ার যোগ্য। তবে, যদি এটি জলের উপর সামান্য ভেসে থাকে, তবে এর অর্থ ডিমটি প্রায় ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পুরনো, কিন্তু এখনও খাওয়ার যোগ্য।
* যদি ডিমটি গ্লাসে রাখার পর উপরে ভেসে ওঠে, তবে বুঝতে হবে ডিমটি তাজা নয়।
* ডিমের ভেতরে একটি ছোট বায়ু কোষ থাকে। ডিমের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোসার ছিদ্র দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে এবং এই বায়ু কোষটি বড় হতে থাকে, যার ফলে বাসি ডিম জলে ভেসে ওঠে।
* তবে, ডিমের গুণমান পরীক্ষা করার এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণরূপে প্রামাণিক নয়, কারণ ডিমের ডোবা বা ভাসা নির্ভর করে ডিমের মধ্যে থাকা আর্দ্রতার পরিমাণের উপর।
টর্চলাইট বা আলো দিয়ে পরীক্ষা করুন
এই পরীক্ষাটি করার জন্য একটি অন্ধকার ঘরে ডিমের একপাশে একটি উজ্জ্বল টর্চলাইট ফেলুন। যদি ভেতরের অংশটি পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ দেখায়, তবে এটি তাজা। যদি ভেতরে কালো দাগ বা ঘোলাটে ভাব থাকে, তবে এটি নষ্ট হতে পারে।
ডিম ভেঙে পরীক্ষা করতে পারেন
* একটি তাজা ডিমের সাদা অংশ ঘন এবং আঠালো হয়, এবং কুসুমটি গোলাকার ও স্পষ্ট থাকে। অন্যদিকে, বাসি ডিমের সাদা অংশ পাতলা হয়ে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে, এবং কুসুম সহজেই ভেঙে যায়। কখনও কখনও, ডিম ভাঙলে তা থেকে একটি অদ্ভুত গন্ধ বের হতে পারে।
* ডিমের কুসুমও ভেঙে যেতে পারে, এবং এটি প্রায়শই মুরগিকে দেওয়া খাদ্যে পুষ্টির ঘাটতির কারণে ঘটে থাকে। মুরগির খাবারে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভুট্টা এবং সোয়াবিন থাকে, তবে এই সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ডিম ঝাঁকান
ডিমটি কানের কাছে এনে আলতো করে ঝাঁকান। যদি কোনও শব্দ না হয়, তবে ডিমটি তাজা। তবে, যদি ঝনঝন বা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হয়, তবে এটি বাসি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফ্রিজের দরজায় ডিম রাখবেন না
* সাধারণত অনেকে ফ্রিজের দরজার তাকে ডিম রাখে। কিন্তু এই অভ্যাসটি ভুল। সারাদিনে ফ্রিজের দরজা বেশ কয়েকবার খোলা ও বন্ধ হয়, যার ফলে ডিমের তাপমাত্রার ওঠানামা ঘটে। তাই, ডিম ফ্রিজের ভেতরের অংশে সংরক্ষণ করা উচিত।
* ফ্রিজে না রেখেও ডিম খাওয়া যায়।
* শীতকালে, ডিম ফ্রিজে না রেখেও অন্তত এক মাস খাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে, ডিম বাইরে ১০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে, ফ্রিজে রাখলে এর মেয়াদ আরও বাড়ে।
এই বিষয়টি মনে রাখবেন
যদি কোনও ডিম থেকে কোনও অদ্ভুত বা পচা গন্ধ (যেমন সালফারের গন্ধ) বের হয়, তবে এর চেহারা যেমনই হোক না কেন, তা অবিলম্বে ফেলে দিন।