
বিশ্বজুড়ে পুরুষদের উর্বরতা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আশার খবর দিল নতুন এক ভারতীয় গবেষণা। যেখানে বহু দেশে পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমান ক্রমশ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেখানে দক্ষিণ ভারতীয় পুরুষদের ক্ষেত্রে ছবিটা একেবারেই উল্টো।
মণিপালের কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ (Kasturba Medical College, Manipal)-এর গবেষকরা সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, গত ১৭ বছরে দক্ষিণ ভারতের পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমানে কোনও উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়নি।
এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘American Journal of Men’s Health’-এ।
গত কয়েক বছরে ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান হ্রাস পাচ্ছে বলে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। এর ফলে অনেক পুরুষই বাবা হতে সমস্যার মুখে পড়ছেন।
শুক্রাণুর মান খারাপ হলে নারীর গর্ভধারণে অসুবিধা হয়। আইভিএফ (IVF) ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এবং দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতা ‘গ্লোবাল স্পার্ম ক্রাইসিস’ নামে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে উল্টো ফলাফল। কস্তুরবা মেডিকেল কলেজের গবেষকরা ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২,০০০-এরও বেশি পুরুষের শুক্রাণু নমুনা বিশ্লেষণ করেন। তারা শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি, জীবন্ততার হার এবং গঠন, এই চারটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন।
ফলাফল বলছে, এই সময়কালে দক্ষিণ ভারতীয় পুরুষদের শুক্রাণুর মানে কোনও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ, বিশ্বব্যাপী শুক্রাণুর মান কমলেও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে পুরুষদের উর্বরতা এখনো স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক।
গবেষকদের মত
গবেষণার প্রধান লেখক ড. সতীশ আদিগা বলেন, 'এই ফলাফল প্রমাণ করে যে দক্ষিণ ভারতের পুরুষদের শুক্রাণুর মান গত ১৭ বছরে অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও পুরুষ বন্ধ্যাত্ব বেড়েছে, তবে সেটা অন্য কারণেও হতে পারে, যেমন জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ, বা খাদ্যাভ্যাস।'
জার্মান সহ-গবেষক স্টেফান শ্লাট যোগ করেন, 'এই গবেষণা বিশ্বজুড়ে 'শুক্রাণু সংকটে'র ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। পুরুষের উর্বরতা বোঝার জন্য আঞ্চলিক তথ্য বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ
এই গবেষণা শুধু ভারতের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের উর্বরতা গবেষণার ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। যেখানে পরিবেশদূষণ, স্ট্রেস, ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে শুক্রাণুর মান হ্রাসের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, সেখানে দক্ষিণ ভারতে স্থিতিশীল ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো জাগায়।