আজকাল আমরা সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। আর তাই ওটস, স্মুদির চক্করে পড়ে সকালে দেশী খাবারের বদলে বেছে নিই ব্রাউন ব্রেড, ওটস, দুধ কর্নফ্লেক্স, স্মুদি, ফ্রুট স্যালাড ইত্যাদি। ফিট থাকতে ফলের স্মুদি, প্রোটিন শেক, হেলথ ড্রিঙ্ক আর নানা রকম সাপ্লিমেন্টে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। সুস্থ থাকতে গালভারী যে খাবার আমরা খাচ্ছি, তাতে অন্য রোগ ডেকে আনছি না তো?
বিজ্ঞাপনে কিংবা প্যাকেটে লো ফ্যাট কিংবা ক্যালোরির উল্লেখ থাকলেও এই শেক, স্মুদি কিংবা প্রোটিন পাউডারের মধ্যে কিন্তু বেশ ভালো পরিমাণেই চিনি থাকে। একে হিডেন সুগার বলে। যা শরীরের পক্ষে একদমই ভাল নয়। আর স্মুদিতেও থাকে অতিরিক্ত চিনি। ডায়াবেটিসকে ডেকে আনার জন্য এই সব খাবারই যথেষ্ট। এছাড়াও সুস্থ থাকতে আপনি জোর দেন ড্রাই ফ্রুটস, ফ্রোজেন খাবার ও নরম পানীয়তে। কিন্তু প্যাকেটজাত ড্রাইফ্রুটগুলিতে অতিরিক্ত নুন যেমন থাকে, তেমনই উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি সম্পন্ন এই সব ফল ওজন বাড়ায়। ডেকে আনে ডায়াবেটিস। এমনিতেই শুকনো ফলকে কৃত্রিম উপায়ে টাটকা ফলের চেয়ে বেশি মিষ্টি করা হয়, তাই বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতাও তৈরি হয় আমাদের। ওজন বাড়ার ভয়ে সাধারণ নরম পানীয়র জায়গায় স্মার্টলি বেছে নিচ্ছেন ডায়েট পানীয়! ভাবছেন, এতে হয়ত ওজনকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু জানেন কি, এই ডায়েট পানীয়ে অতিরিক্ত চিনি থাকায় তা রক্তে শর্করা বাড়ায়। ওজন বৃদ্ধিতেও এটি অত্যন্ত পারদর্শী।
সকালের খাবারে কী খাবেন
আর তাই চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ সকলেই পরামর্শ দিচ্ছেন মা-ঠাকুমার সেই পুরনো ডায়েটে ফিরে যেতে। অর্থাৎ সুস্থ থাকুন, চিঁড়ে-ভাত মুড়িতেই। সকালে লিকার চায়ের সঙ্গে খান একমুঠো মুড়ি, রান্নায় চিনির বদলে মধু, গুড়ের বাতাসা, নারকেলের চিনি এসব ব্যবহার করুন। দুপুরে সাধারণ ভাত-তরকারি-মাছ খান। টিফিনে খান খই, চিঁড়ে, মুড়কি, বাতাসা, গুড় ইত্যাদি। এসব খেলে ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে, আর শরীরও থাকবে সুস্থ। এখনও কিন্তু অনেকেই সকালে দই, চিঁড়ে, কলা, গুড় একসঙ্গে মেখে খেতে অভ্যস্ত।
ব্রেকফাস্টে তাই চিঁড়ে-দই খান
এছাড়াও চিঁড়ের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। চিঁড়েতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক কম। ফলে এটি ডায়রিয়ার মতো ক্রনিক অসুখ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের প্রদাহ, এবং ডাইভারটিকুলাইটিস–এর মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ উপযোগী। সকালে চিঁড়ের সঙ্গে খানিকটা টক দই খেলে তা ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে তা অবশ্যই চিনি ছাড়া। তবে একান্তই যদি চিনি ছাড়া খেতে অসুবিধা হয় তাহলে মধু দিয়ে খেতে পারেন। পেট ঠাণ্ডা করতে এবং শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করতে চিঁড়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি চিঁড়ে কিন্তু পেটে অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে, ফলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে এবং খুব তাড়াতাড়ি খিদে পায় না।
খান চিঁড়ে-দই-বাতাসা
বাতাসা সাধারণত চিনি অথবা গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়। একটি ছোট বাতাসায় ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ থাকে। দেহে গ্লুকোজের চাহিদা মেটায় বাতাসা। তাই প্রাতঃরাশে মুড়ি বাতাসা কিংবা, চিঁড়ে-দই-বাতাসা খুবই উপাদেয়। সুতরাং বিদেশি ফ্যান্সি খাবারের বদলে ঘরোয়া খাবারের ওপরই ভরসা রাখুন। এতে যেমন কমবে ওজন সুস্থও থাকবেন আপনি।