সিকিমের পেলিংয়ের খেচিপেরি লেক। এই লেক পাহাড়ি আর পাঁচটা লেকের মতোই অপরূপা হলেও এর একটা আলাদা পরিচিতি রয়েছে। বলা ভাল বিশেষত্ব রয়েছে। এই লেকের জলে পাতা ভাসে না। আপনি যখনই যান, লেকের জলে একটিও পাতা দেখতে পাবেন না। স্থানীয়রা এই লেককে ইচ্ছাপূরণের লেক বলেন। এখানে গিয়ে প্রার্থনা করলে নাকি ইচ্ছেপূরণ হয়। একজনও এমন স্থানীয় লোক পাবেন না। যিনি এই কিংবদন্তীর বিরুদ্ধে একটিও কথা বলবেন। প্রত্য়েকেই বলবেন, তাঁর পরিবারের কোনও না কোনও ইচ্ছেপূরণ হয়েছে হ্রদটিতে মানত করে।
শিলিগুড়ি বা গ্যাংটক থেকে পৌঁছন পেলিং
শহরের ভিড় থেকে দূরে কয়েকদিন ভাল লাগা, ভক্তিভরে কিংবদন্তী আর বিশ্বাসের দোলাচলে কয়েকটা দিন কাটাতে এর বিকল্প নেই। পেলিংয়ের উচ্চতা ৬৮০০ ফুট। শিলিগুড়ি থেকে পেলিং-এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। আর গ্যাংটক থেকে ১১৭ কিমি। দার্জিলিং-এর মতো ঘিঞ্জি নয়। যাঁরা একটু নিরিবিলি পছন্দ করেন বা যাঁরা কিছুটা একান্ত প্রকৃতির কোলে নিজেকে সঁপে দিতে চান, তাঁদের পক্ষে শান্তির জায়গা হচ্ছে পেলিং। আর পেলিংয়ের আকর্ষণ হল খেচিপেরি লেক।
“ইচ্ছাপূরণ হ্রদ” খেচিপেরি
পেলিং থেকে খেচিপেরি লেকের দূরত্ব ২৬ কিমি। জিপ বা ছোট গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে খেচিপেরি লেকে।গাড়ি একদম লেকে ঢোকার মুখে প্রধান গেটের সামনে নিয়ে গিয়ে নামাবে। এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে লেকের কাছে। ঢোকার মুখেই বিশ্বাস আর ভক্তির প্রমাণ দিয়ে একটা সাইনবোর্ড টাঙানো দেখা যাবে। যাতে লেখা রয়েছে “ইচ্ছাপূরণ হ্রদ”। এখানে হাতজোড় করে প্রার্থনা করলে যে কোনও ইচ্ছা পূরণ হয় বলেই বিশ্বাস।
টলটলে জল কাচের মতো স্বচ্ছ
এই পবিত্র এই হ্রদে ধুমপান, মল-মূত্র ত্যাগ করা নিষিদ্ধ। হই-হট্টগোল করাও বারণ, তাই সব সময় গা ছমছমে ঠাণ্ডা ভাব ঘিরে থাকে লেকটিকে। লেকে চলার পথ বেশ অন্ধকার। কানে ভেসে আসবে জানা-আজানা পাখির কুজন। কিছুটা হাঁটার পর দেখা মিলবে ঘন সবুজ জঙ্গলে ঘেরা স্বচ্ছ টলটলে জলের হ্রদ।
চারিদিকে গাছ থাকলেও লেকে পাতা ভাসে না
পবিত্র এই লেকের বৈশিষ্ট্য হল, চারপাশে প্রচুর সবুজ গাছ তাদের পাতাগুলি ডুবিয়ে দিয়েছে লেকের জলে, কিন্তু লেকে একটিও পাতা আপনি কখনও পড়ে থাকতে দেখবেন না। বলা হয়, কোনও পাতা জলে পড়লে তক্ষুণি পাখিরা এসে তা ঠোটে করে তুলে নেয়। কাঠের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়ের প্রথা অনুযায়ী লেকের ধারে একটি ছোট্ট মন্দির আছে। মনোবাসনা পূরণ হলে ভক্তরা এসে এখানে তাদের পবিত্র পতাকা বেঁধে যায়।
এছাড়াও যা দেখতে পারেন
পেমিয়াংসি গুম্ফাঃ পেলিং ছাড়িয়ে ২ কিমি দূরের পেমিয়াংসি গুম্ফা। ১৬৯৭ সালে লাটসুন চেম্পো এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে মন্দিরটি গুম্ফায় পরিণত হয়। চারতলা সমান উঁচু রক্তিম বর্ণের বর্তমান গুস্ফাটি সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মনাস্ট্রি। গুম্ফার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে ধাতুনির্মিত বুদ্ধের ধ্যানরত মূর্তি। বুদ্ধমূর্তি ছাড়াও রয়েছে, বজ্রকালা, বজ্রপাল, পদ্মসম্ভাবা এবং লোককিশোরের মূর্তি। গুম্ফার তিনতলায় রয়েছে মহাগুড়ির স্বর্গীয় প্রাসাদ ‘সাংতোকপালরি’। এর কাঠের ভাস্কর্য সকলকে মুগ্ধ করে দেয়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলসঃ ২০০ ফুট উঁচু থেকে শক্ত পাথরের গা বেয়ে আছড়ে পড়ছে এই প্রপাত। তবে সামনে যেটি দেখবেন সেটাই মুখ্য নয়, আসল ফলসটি একটু ভিতরে দু’টি পাহাড়ের খাঁজ থেকে পড়ছে। সেটি আরও সুন্দর। কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলসের রাস্তা বিপজ্জনক। বাঁশের মই বেয়ে অনেকটা উঠতে হবে। এখানে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু থেকে প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ছে।
সিংসোর ফলসঃ রিম্বির কাঠের এই ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের আর একদিকে যেতে হবে। পেলিং থেকে এই ফলস ও সেতুর দূরত্ব ২০ কিমি। দু’টি পাহাড়কে যুক্ত করে ঝুলন্তভাবে নির্মিত হয়েছে এই আশ্চর্য সেতু। সবুজ পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে এই সেতুর শোভা এককথায় অপূর্ব।
কীভাবে যাবেন?
শিলিগুড়ি জংশনে সিকিম স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাস টার্মিনাস থেকে পেলিং বা গেজিং যেতে পারেন। স্ট্যান্ড। এ ছাড়াও একটু এগিয়ে তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে শেয়ারের ছোট এসইউভি পাবেন। নিজেরা রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। আবার সোজা গ্যাংটক পৌঁছে সেখান থেকেও আসতে পারেন পেলিং।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জায়গার অভাব নেই। গ্যাংটকের মতো ভিড় নেই। তাই জায়গা পাওয়া যায়। তবে ৮-১০ জনের দল গেলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া ভাল। এখন প্রচুর হোমস্টে রয়েছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
খরচ কেমন?
একজনের ২ রাত্রি ৩ দিন ঘোরার জন্য আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে যদি দলে ভারী হন, তাহলে মাথাপিছু খরচ কমবে। এলাকা প্রত্যন্ত তাই সব কিছু ৃর খরচ একটু বেশি। একদিনের জন্য গেলে ৪-৫ হাজার টাকা লাগবে।