Summer Vacation Destinations Of North Bengal: গরমের ছুটি (Summer Vacation) সামনে। এখন থেকেই জায়গা ঠিক করে ট্রেনের টিকিট কাটতে না পারলে সুযোগ মিলবে না। গরমের ছুটিতে আমাদের পাহাড়ের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বরাবরের। এমনকী এই আনন্দ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরও (Rabindranath Tagore) ছিল। তাই পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর স্মৃতি। যাই হোক এখন নিজেদের কথায় ফিরি। দার্জিলিং (Darjeeling) আমাদের এতবার ঘোরা যে সব সময় কিছু নতুন জায়গায় যেতে চাই। এবার আপনাদের কিছু চেনা-অচেনা গন্তব্যের ঠিকানা দিচ্ছি যেগুলিতে গরমের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিটি জায়গাই মনে হবে স্বর্গের (Feeling Of Heaven)কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন। কখনও মেঘ, কখনও রোদ, কখনও পাখি, কখনও জন্তু-জানোয়ার। কখনও বৃষ্টি কখনও হিমেল হাওয়া। তবে সব সময়ই একটা দারুণ শিরশিরে ওয়েদার। মে হোক কিংবা জুন, আপনাকে রাতে চাদর-সোয়েটার মুড়ি দিতেই হবে। আসুন জেনে নিই...
১. লেপচাজগত
ব্রিটিশদের হাত ধরেই সামনে এগিয়ে আসা এই পাহাড়ি জনপদের। এটি আদি বাসিন্দাদের নিজস্ব গ্রাম। দার্জিলিংয়ের আদি বাসিন্দাই হল লেপচারা। পাহাড়, জঙ্গল, পাখি, ঝরণা আর নানা রঙিন ফুলে ঢাকা এই সবুজের স্বর্গরাজ্য। মধুচন্দ্রিমার জন্যও আদর্শ জায়গা। ওক, পাইন, রডোডেনড্রন, তার সঙ্গে ধুপি, গুরাস, চাপ, কাওলা, শাল নানা পাহাড়ি গাছে ছেয়ে আছে রাস্তার দু’ধার। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন হাতের কাছে। দার্জিলিং থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্ব লেপচাজগৎ থেকে কাছেই ঘুরে আসতে পারেন মিরিক, ঘুম, মানেভঞ্জন, বাতাসিয়া লুপ, গোপালধারা, সীমানা ভিউ পয়েন্ট বা জোরপোখরির মতো জায়গাগুলো। কালিম্পং-কার্শিয়ংও ঘুরে আসা যায় এখান থেকে। এতগুলো জায়গা যাওয়ার সময় না থাকলে লেপচাজগৎ থেকে গাড়ি নিয়েই ঘুম মনাস্ট্রি, মিরিক লেক দেখে আসুন। লামাহাটা, তাকদা, তিনচুলেও খুব দূরে নয়। পর্যটন মানচিত্রে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ছোট গ্রামটি।
২. সিটং
সিটং শীতে কমলালেবুর দেশ। গরমে মেঘের স্বর্গরাজ্য। তিরতিরে হাওয়া সব সময় চুল এলো করে দেবে। শিবখোলা, অহলদারা নামথিং পোখরি থেকে কাছেই সিটং। কার্শিয়াং থেকেও মাত্র কয়েক কিলোমিটার। সিটং-এর হোমস্টেগুলি দারুণ। কাঠের তৈরি রুমগুলি অসাধারণ। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সামনে রেখে মেঘ-রোদের লুকোচুরি দেখে, হোমস্টের সুন্দর সাজানো টায়ারের ওপরে কাচ বসানো টেবিল আর বেতের চেয়ারে বসে কমলালেবু, সান্ধ্যকালীন দার্জিলিং চা আর মোমো খাওয়ার মজাই আলাদা। স্থানীয় লাঞ্চও দারুণ। যা চাইবেন আগে থেকে বলে দিলে তাই পাবেন। তবে স্থানীয় কায়দায় তৈরি লাঞ্চ করাই ভাল।
৩. দাওয়াইপানি
সিঞ্চল অভয়ারণ্যে অবস্থিত ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রাম। কলকাতা বা শিলিগুড়ির যানজট ও কোলাহল এড়িয়ে নিরিবিলিতে এক-দুদিন রাত থাকার জন্য এক দারুণ জায়গা। অফবিট হলেও লোকজনের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। এখন সারা বছরই লোক আসেন নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে। তবে যথেচ্ছ হোমস্টে না থাকায় কখনও কনজেস্টেড মনে হবে না। পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের ধারে বসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা দার্জিলিং চা, আর কী চাই? সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ চিকেন আর মন ভাল করা আড্ডা। ভাগ্য ভাল বা মন্দ যাই বলুন না কেন লেপার্ড চলে আসতে পারে। এর একটু উপরে হেঁটে চলে গেলে রেড পান্ডা ব্রিডিং সেন্টার রয়েছে। যা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের আওতায়। সেখানে ঢুকতে দেবে না। তবে বাইরে থেকেও পান্ডাগুলি গাছে উঠলে দিব্যি বাইরে থেকে দেখা যায়।
৪. কোলাখাম
কোলাখাম আর একটি দুর্ধর্ষ লোকেশন। লাভা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। ন্যাওড়া ভ্যালি ন্যাশানাল পার্কের ভিতরে অবস্থিত এই জায়গাটি নেচার লাভারদের স্বর্গ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা। দুপাশে ঘন জঙ্গল। ভাগ্য সঙ্গ দিলে বন্য জন্তুর দেখাও মিলতে পারে। যেতে যেতে নেওড়া-ভ্যালি সাফারি পড়বে চোখে। হোম-স্টের বাইরে বা আশপাশে কোথাও অলস বসে থাকলেই পয়সা উশুল। কাছেই রয়েছে ছাঙ্গে ওয়াটারফলস। সকাল সকাল বেরিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। এটার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার।
৫. রামধুরা
কালিম্পং শহর থেকে কাছে। মাত্র ১৫ কিলোমিটার মতো দূরত্ব। দাঁরাগাঁওয়ের কাছেই রামধুরা। কালিম্পংয়ের সঙ্গে বা আলাদা করেও থাকতে যাওয়া যায়। হোমস্টে পৌঁছে বিকেলটা অলসভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন। ঘুরতে পারেন আশপাশে। পরের দিন সকালে চা খেয়ে কিছুটা ট্রেকিং করে ইচ্ছেগাঁও চলে যান, ওখানে কিছু সময় কাটিয়ে আবার নীচে নেমে আসুন। পথেই পাবেন সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশন। ফিরে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন পরবর্তী গন্তব্যে। আর যাঁরা একটা দিন থাকতে চান, তাঁরা সারাদিন বসে মেঘের আনাগোনা দেখুন। ফুলের, পাখির ছবি তুলুন। বিকেলের দিকে ফুটবল মাঠে গিয়ে ওখানকার লোকেদের খেলা দেখুন। এই ভাবেই ঘুরে ফেলুন রামধুরা।