শীত প্রায় দোরগোড়ায়। শীতের মরসুমে সাইট্রাস ও রসালো জাতীয় ফল খাওয়া খুব ভাল। এই মরসুমি ফলের মধ্যে কমলালেবু। এটি শুধু খেতেই সুস্বাদু তা নয়, এই ফল স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী। তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। এমনকি ত্বক প্রাণহীন হয়ে যায় এবং হজমশক্তি দুর্বল হতে থাকে। কমলালেবু এমন একটি ফল যা, স্বাস্থ্যকর শরীরের পাশাপাশি উজ্জ্বল ত্বকও দেয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কমলালেবুর কতটা উপকারী।
* ওজন কমাতে কার্যকর- কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা ওজন কমানোর পাশাপাশি হজমশক্তিকেও শক্তিশালী করে। দ্রবণীয় ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস রোধ করে। একারণে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের জন্য উপকারী- শীতকালে ত্বক, স্বাস্থ্য ও হজমশক্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কমলালেবুতে মজুত ভিটামিন সি শরীরে কিছু জীবাণু প্রতিরোধে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি ত্বককে সুস্থ ও তরুণ দেখাতে দারুণ কাজ করে।
* হার্টের জন্য ভাল- আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সাইট্রাস ফল, বিশেষ করে কমলালেবু স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, কমলালেবুতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। এই ফল রক্তের কোষের কার্যকারিতাও উন্নত করে।
* কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমায়- প্রস্রাবে সাইট্রেটের অভাব হলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। সাইট্রেট হল একটি সাইট্রিক অ্যাসিড যা, সাধারণত সাইট্রাস ফল যেমন কমলালেবুতে পাওয়া যায়। ছোট পাথরের রোগীদের সাধারণত এক গ্লাস কমলালেবুর রস পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি প্রস্রাবে সাইট্রেটের মাত্রা বাড়ায়, যা পাথর গঠনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
* সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে- শীতের মরসুমে সর্দি-কাশি হওয়া সাধারণ ব্যাপার। এই রোগ থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভাল উপায় হল, এই মরসুমে প্রচুর পরিমাণে কমলালেবু খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সর্দি-কাশিতে ভিটামিন সি উপকারী। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, তাই শীতকালে কমলালেবু খেলে ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়।
* রোগের ঝুঁকি কম: কমলালেবু ভিটামিন সি- তে পূর্ণ। যা, ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে নিরপেক্ষ করে কোষকে রক্ষা করে। এটি তাড়াতাড়ি বার্ধক্যের জন্য দায়ী এবং ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ।
* ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: কমলা সাইট্রাস লিমোনয়েড সমৃদ্ধ (সাইট্রাস ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল), ত্বক, ফুসফুস, স্তন, পাকস্থলী এবং কোলন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
* কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে: কমলালেবুতে ফাইবার থাকে। ফলে এগুলো কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
* হজমে সাহায্য করে: কমলা ডায়েটারি ফাইবারে পরিপূর্ণ যা, হজমের রসকে উদ্দীপিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এমনকি সাদা সুতোর মতো জিনিসটিও তন্তুযুক্ত।
* বার্ধক্য বিলম্বিত করে: কমলালেবু বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। যা, একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
* দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: কমলালেবু ক্যারোটিনয়েড যৌগ সমৃদ্ধ। যা খাওয়ার সময় ভিটামিন এ রূপান্তরিত হয় এবং ম্যাকুলার (রেটিনার কাছাকাছি একটি রঙ্গক) ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: কমলালেবুতে পাওয়া ফ্ল্যাভোনয়েড হেস্পেরিডিন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং পরিমিত খাবার খান তাহলে, এই শীতে খাবারের তালিকায় অবশ্যই কমলালেবু যোগ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন সকলের স্বাস্থ্যের জন্য, সব কিছুর পরিমাণ এক নয় এবং কোনও কিছুই অত্যাধিক খাওয়া ভাল না। তাই অবশ্যই পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
** এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। এটি কোনওভাবেই কোনও ওষুধ বা চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে না। তাই যে কোনও সমস্যায় অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।