নিরামিষাশীদের কাছে প্রোটিনের প্রধান উৎস পনির। প্রতিদিনের ভারতীয় খাদ্যের তালিকায় অথবা শাহী কোনও পদ তৈরিতে এই জনপ্রিয় দুগ্ধজাত খাবার সকলেরই প্রিয়। তবে সম্প্রতি পঞ্জাবে গুণগত মান পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি পনিরের নমুনায় রয়েছে ভেজাল।
পঞ্জাব স্বাস্থ্য দফতরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৩১টি পনিরের নমুনার মধ্যে ১৯৬টি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ৫৯টি পনিরের নমুনা পরীক্ষার পর বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে খাওয়ার অনুপযুক্ত। এই ভেজালের পিছনে মূলত দায়ী স্টার্চ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার। পঞ্জাবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. বলবীর সিং কঠোর ভাষায় বলেন, 'এই ধরনের রাসায়নিক কোনও ভাবেই পনির তৈরিতে ব্যবহার করা উচিত নয়। আমি সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিই, তারা যেন বাড়িতে পনির তৈরি করে খায় অথবা কোনও স্বীকৃত ব্র্যান্ড থেকে পনির কেনে। বাজার থেকে পনির কেনা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। আগে ঘরে মেয়েরা দুধ ফাটিয়ে পনির বানাতেন। সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত।'
এখানেই থেমে থাকেনি বিষয়টি। ঘিয়ের নমুনা পরীক্ষাতেও ভেজালের চিত্র উঠে এসেছে। ২২২টি ঘিয়ের নমুনার মধ্যে ২০টি গুণগত মানের পরীক্ষায় ডাহা ফেল হয়েছে। ২৮টি ছিল সম্পূর্ণ অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ড. সিং ‘A2 ঘি’ নিয়ে প্রচলিত ধারণা সম্পর্কেও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'A2 ঘি বলে কিছুই নেই। আমরা দেখেছি কিছু বিক্রেতা এটি ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। বাস্তবে A2 এবং A1 ঘির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বিভ্রান্ত হবেন না। ঘি ঘরেই তৈরি করুন। এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয়।'
CK Birla হাসপাতালের প্রধান ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট প্রাচী জৈনও ঘরে তৈরি দুগ্ধজাত পণ্যের দিকেই ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন, 'ঘরে তৈরি পনির বা ঘিয়ের উপকরণ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভালো মানের দুধ, সম্ভব হলে অর্গানিক দুধ ব্যবহার করলে স্টার্চ, কৃত্রিম কঠিন পদার্থ বা নিম্নমানের ফ্যাটের ভেজাল এড়ানো যায়।' তিনি আরও বলেন, 'বাড়িতে তৈরি এই সব পণ্যে সংরক্ষক থাকে না। কিন্তু বাজার থেকে কেনা পনির ও ঘিয়ে অ্যান্টি-ফোম এজেন্ট, ব্লিচিং কেমিক্যাল বা সংরক্ষণ বাড়াতে বিভিন্ন অ্যাডিটিভ।'
ঘরে তৈরি দুগ্ধজাত পণ্য সতেজতা ও স্বাস্থ্যবিধির দিক থেকেও এগিয়ে। দুধ ফোটানো থেকে শুরু করে ঘি ছাঁকার প্রতিটি ধাপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টিগুণও এতে ভালো থাকে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও একটি প্রায়ই উপেক্ষিত বিষয় হল সোডিয়াম। বাজারে বিক্রি হওয়া পনিরে অনেক সময় স্বাদ ও সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত নুন মেশানো হয়। কিন্তু ঘরে তৈরি পনিরে নিজে না মেশালে এটিতে স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি সবার পক্ষে ঘরে পনির ও ঘি তৈরি করা সম্ভব? যদিও এটি সবচেয়ে নিরাপদ উপায়, কিন্তু সময়, পরিশ্রম এবং প্রচুর পরিমাণে দুধের প্রয়োজন হয় এই পণ্যগুলি বাড়িতে তৈরি করতে। যা রোজকার কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকের পক্ষেই কঠিন। তবুও, যদি সময় ও শ্রম ব্যয় করতে পারেন, তবে নিজেই পনির ও ঘি তৈরি করাই হতে পারে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ বিকল্প। কারণ যত দিন যাচ্ছে, ভেজালের ঘটনা বাড়ছে পনির ও ঘিয়ের ক্ষেত্রে।