প্রতিটি মেয়ের জীবনে পিরিয়ড শুরু হওয়াটা একটা নতুন শুরুর মতো। সাধারণত যখন পিরিয়ড শুরু হয়, তখন মেয়েরা এটা নিয়ে খুব দ্বিধা বোধ করে এবং কখনও কখনও এটির সম্পর্কে না জানার থাকার কারণে সে ভয়ও পায়। মেয়েদের মনেও এই বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে, যা তারা প্রায়শই তাদের মাক- কাকিমাদের জিজ্ঞাসা করে। কখনও কখনও তারা এটিকে একটি রোগ বলেও মনে করে, কারণ পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর তাদের জীবনে কিছু পরিবর্তনও দেখা যায়। যদিও পিরিয়ড মেয়েদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক ঘটনা। এর মাধ্যমেই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে মেয়েটির শরীর বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ করেছে এবং ফার্টিলিটি পরিস্থিতি শুরু হয়েছে।
পিরিয়ড ছাড়াও, অনেকে এই ঘটনাকে মাসিক, ঋতুস্রাবের মতো নামেও ডাকে। পিরিয়ড সম্পর্কে মেয়েদের অনেক প্রশ্ন থাকে। তবে বেশিরভাগ মেয়ে এবং তাদের বাবা-মায়ের মনে যে প্রশ্নটি আসে তা হল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সঠিক বয়স কত? যদি খুব তাড়াতাড়ি বা খুব দেরিতে পিরিয়ড শুরু হয়, তাহলে কি এটি একটি সাধারণ বিষয় নাকি উদ্বেগের বিষয়? এই বিষয়ে আজতককে সবিস্তারে জানিয়েছেন, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ।
পিরিয়ড শুরু হওয়ার সঠিক বয়স কত?
দিল্লির সিকে বিড়লা হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ কীর্তি খৈতান, আজতক ডট ইনকে বলেন, "অনেক সময় ৮ থেকে ৯ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড শুরু হওয়াকে খুব তাড়াতাড়ি বলে মনে করা হয়। কারণ এটি অকাল বয়ঃসন্ধির লক্ষণ হতে পারে। বেশিরভাগ মেয়ের পিরিয়ড বা প্রথম পিরিয়ড ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। গড়ে ধরতে গেলে প্রায় ১২ বছর বয়স থেকে শুরু হয়।"
চিকিৎসক আরও জানান, "অনেক ক্ষেত্রে, পিরিয়ড ৮-৯ বছর বয়সে শুরু হতে পারে এবং এটি কখনও কখনও স্বাভাবিক বলেও বিবেচিত হয়। যদি সেই মেয়েটির শরীরের বিকাশ ঠিক থাকে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার বয়স শরীরের বৃদ্ধি, জীবনধারা, স্বাস্থ্য এবং হরমোনের পরিবর্তন, জেনেটিক্সের উপর নির্ভর করে। যদি কোনও মেয়ের ৮-৯ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড শুরু হয়, তাহলে এই অবস্থাকে অকাল বয়ঃসন্ধি বলা হয়, এটি স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয় না এবং এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।"
কখন, কোনও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক?
ডাঃ কীর্তি বলেন, "৮ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড শুরু হওয়াকে অকাল বয়ঃসন্ধি বলা হয় এবং এটি এড়ানোর জন্য চিকিৎসা রয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা ভাল। যদি ১৫-১৬ বছর বয়সের মধ্যেও পিরিয়ড শুরু না হয়, তাহলে এটিও অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয় এবং ডাক্তার কাছে গিয়ে চেকআপ করা উচিত।" অনেক সময় বহু মেয়ের ১৬ বছর বয়সেও পিরিয়ড না হওয়াকে সাধারণ বিষয় বলে মনে করে অনেকে। তবে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। নয়তো এটি ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
উপযুক্ত বয়সের আগে পিরিয়ড হওয়ার কারণ
* হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
* স্থূলতা বা খারাপ খাদ্যাভ্যাস
* জেনেটিক্সের কারণ
* থাইরয়েড বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা
* কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের প্রভাব
দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার কারণ
* দুর্বলতা
* অতিরিক্ত ব্যায়াম বা ক্রীড়া জীবনধারা
* মানসিক চাপ
* পিসিওএসের মতো হরমোনজনিত রোগ
* পরিবারে দেরিতে পিরিয়ডের ইতিহাস
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
* যদি ৮ বছরের আগে পিরিয়ড শুরু হয়।
* যদি ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড না শুরু হয়।
* যদি প্রথম পিরিয়ডের পরেও মাসিক চক্র দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়মিত থাকে।
* প্রচণ্ড ব্যথা, অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ।
মায়েদের কখন পিরিয়ড সম্পর্কে কথা বলা উচিত?
পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং প্রতিটি মেয়েকেই কোনও না কোনও সময়ে এই স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মানুষ পিরিয়ড সম্পর্কে কথা বলতে লজ্জা পায় এবং সেই কারণেই মেয়েরা এটি সম্পর্কে জানে না এবং প্রথমবার যখন তাদের পিরিয়ড হয়, তারা খুব ভয় পায়। মা হলেন প্রতিটি শিশুর প্রথম শিক্ষক এবং মায়ের উচিত মেয়েকে আগে থেকেই পিরিয়ড সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা, যাতে সে সহজেই এই প্রক্রিয়াটির মুখোমুখি হতে পারে।
সাধারণত পিরিয়ড ১০ বছর বয়সের পরে আসে, তাই মেয়ের ৮ বছর বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়েদের উচিত মেয়ের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলা। নয়তো বহুক্ষেত্রে, পিরিয়ডের সময় মেয়েরা সবার থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং তাদের বাবা, ভাই বা পুরুষের সামনে বিশেষভাবে অস্বস্তি বোধ করে। মায়ের উচিত পিরিয়ড সম্পর্কে ট্যাবু ভেঙে তার মেয়েকে সঠিক তথ্য দেওয়া।