ত্বকের রং বদলে যাওয়ার পোশাকি নাম হল পিগমেন্টেশন। স্কিন টোন যখন গাঢ় হতে শুরু করে, তাকে বলে হাইপার-পিগমেন্টেশন। তা গোটা শরীরে ছড়াতে পারে কিংবা হতে পারে কোনও নির্দিষ্ট অংশে। অনেক সময়ে মুখে ফুটে ওঠা দাগ, যা এজ স্পট বা লিভার স্পট নামেই বেশি পরিচিত, তা কিন্তু আদতে হাইপার-পিগমেন্টেশনই। অনেকে মুখের এই কালো দাগ নিয়ে চিন্তায় থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালো ব্রণের দাগ, অত্যধিক সূর্যের এক্সপোজার বা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। বাজারে ভিন্ন ধরণের ক্রিম এবং সেরাম পাওয়া যায়। তবে এই চিকিৎসা, বিকল্পগুলির ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে।
কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে যার ফলে মুখের কালো দাগ অর্থাৎ ডার্ক স্পট দূর করা সম্ভব। তবে গোটা মুখে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই একটি প্যাচ পরীক্ষা করুন, আপনার ত্বক সংবেদনশীল কিনা। প্রাকৃতিক উপাদানগুলি আপনাকে হাইপারপিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করতে এবং ত্বকের পুনর্নবীকরণকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করতে পারে। আসুন জানা যাক, কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকারের কথা, যা ব্যবহারে আপনি মুখের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেল ক্ষত নিরাময় থেকে ময়শ্চারাইজিং সমস্ত কিছুতে দারুণ উপকারী। মুখের কালো দাগ দূর করতেও এটি খুব ভাল। আপনি সরাসরি গাছ থেকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন বা বাজার থেকে অ্যালোভেরা জেল কিনতে পারেন। এটি ব্যবহার করার জন্য, অ্যালোভেরার রস বা প্রাকৃতিক অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেড এলাকায় প্রয়োগ করুন। এটি সকাল এবং সন্ধ্যায় ৩০ মিনিট মতো মুখে রাখুন এবং এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
অ্যালোভেরা জেল দিয়েও একটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। একটি প্যাক তৈরি করতে- অ্যালোভেরা গাছের পাতা থেকে জেল বের করে নিন। এরপরে,তাজা কুড়িয়ে নেওয়া শসা, লেবুর রস, ১ চামচ চন্দন গুঁড়ো যোগ করুন এবং ভাল ভাবে মেশান। এটি ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিন। এরপর বরফ-ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
চন্দন
চন্দনের জাদুকরী গুণ রয়েছে। এটিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা, দাগ এবং ব্রণ কমাতে করতে সহায়তা করে। আপনাকে শুধু ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো, কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল এবং কমলা লেবুর রস যোগ করতে হবে। এই সমস্ত উপকারণের মসৃণ পেস্ট না পাওয়া পর্যন্ত আপনি আরও কমলালেবুর রস যোগ করতে পারেন। এবার প্যাকটি আপনার মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে, ময়েশ্চারাইজার লাগান।
হলুদ গুঁড়ো
ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে হলুদের গুঁড়ো দারুণউপাদান। দ্রুত ফলাফল পেতে আপনি একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়োর সঙ্গে ১-২ চা চামচ দুধ এবং ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই তিনটি উপাদান মিলিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে ২০ মিনিটের জন্য এই ফেসপ্যাক রেখে, হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। আপনি দুই সপ্তাহের জন্য নিয়মিত এটি ব্যবহার করতে পারেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের পার্থক্য দেখতে পাবেন আপনি।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সাইডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড রয়েছে যা স্কিন পিগমেন্টেশন হালকা করতে এবং ত্বকের সামগ্রিক চেহারা উন্নত করতে সাহায্য করে। এই প্রতিকারটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটি পাত্রে সমান পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার এবং জল মেশাতে হবে। আপনার গাঢ় দাগে প্রয়োগ করুন এবং ৫ থেকে ৭ মিনিট রেখে দিন। এরপরে, হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগান। আপনি চাইলে ভিনেগারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
পেঁপে
পেঁপেতে প্যাপেইন নামক এনজাইম রয়েছে যা ত্বকের টোনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে এবং ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। সবুজ পেঁপে থেকে বীজ খোসা ছাড়িয়ে নিন। পেঁপের পাল্প ব্যবহার করুন। সকালে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২০-৩০ মিনিটের জন্য ডার্ক স্পটের স্থানে প্রয়োগ করুন। হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
এই সৌন্দর্য প্রতিকারগুলির যে কোনও একটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। প্রথমে মুখে অল্প পরিমাণে লাগান এবং অল্প সময়ের জন্য রেখে দিন। যদি কোনও অস্বস্তি অনুভব না করেন, বেশি করে প্যস্ক লাগাতে পারে। তবে কোনও সমস্যা বোধ করলে, অবিলম্বে মিশ্রণটি ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন যে, আপনি যখন এই প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলি ব্যবহার করছেন তখন ডার্ক স্পট কমানোর জন্য, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব সরাসরি সূর্যের আলোতে না আসতে।