মুখ সুন্দর ও উজ্জ্বল করার পাশাপাশি, ব্রণ দূর করার জন্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন ধরণের ঘরোয়া প্রতিকার এবং হ্যাকশের সাহায্য নেয়। সম্প্রতি, দ্য লল্লনটপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, তামান্না ভাটিয়া এক চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
অভিনেত্রী জানিয়েছেন যে, তিনি ব্রণর উপর তাঁর থুতু লাগান। এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও অনেক অদ্ভুত বিউটি হ্যাক সামনে এসেছে। মুখ সুন্দর করার আশায়, অনেক সময় মানুষ ঠিক- ভুল না জেনেই, ত্বকের জন্য অনেক কিছু করেন। সব কিছুরই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক আছে।
তামান্না জানান, তিনি থুতু লাগিয়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। কিন্তু এমন নয় যে, এটা সব ধরণের ত্বকের ক্ষেত্রে কার্যকরী। এই বিউটি হ্যাক ইন্টারনেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে, সবার মনে একটাই প্রশ্ন, থুতু লাগিয়ে কি সত্যিই ব্রণ নিরাময় করা সম্ভব? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, এই হ্যাক আপনার জন্য ভাল না খারাপ হতে পারে।
থুতু কীভাবে তৈরি হয় এবং এর কাজ কী?
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, লালা কী। আমাদের মুখে একটি তরল পদার্থ থাকে যাকে লালা বলা হয়। এটি আমাদের মুখের লালা গ্রন্থি দ্বারা তৈরি হয়। এর পিএইচ মান ৬.২ থেকে ৭.৬-র মধ্যে এবং গড় পিএইচ ৬.৭। মুখের ভিতরে লালা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন খাবার হজমে সাহায্য করা, দাঁত রক্ষা করা এবং মুখকে আর্দ্র রাখা। আসলে, লালার বাফারিং ক্ষমতা রয়েছে, যা মুখের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জেনে রাখুন যে লালার পিএইচ মান খাদ্য ও পানীয়, মুখের স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
থুতুতে কী ধরণের এনজাইম থাকে?
আজতক এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে, দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ডিএম মহাজন বলেন, "লালার পিএইচ মান ক্ষারীয় এবং স্বাভাবিক ত্বকের পিএইচ মান অ্যাসিডিক, যা ব্যাকটেরিয়া এবং ক্ষতিকারক অণুজীব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে লালাতে একটি এনজাইম থাকে যা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম। এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে তাদের কোষ প্রাচীর ভেঙে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং তাদের প্রদাহ কমায়।"
এটি কীসের জন্য ব্যবহৃত হয়?
ডাঃ মহাজন আরও বলেন, "ব্রণ হল একটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি ব্রণর ফোলাভাব এবং পুঁজের প্রধান কারণ। প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার পরে, যদি সেই জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যাকে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়া বলা হয়। লালাতে কর্টিসল থাকে, যা ব্রণর ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কখনও কখনও এটি উপকারী, কখনও কখনও এটি কম প্রভাব দেখায়।"
সংবেদনশীল ত্বকে থুথু লাগানো কি ঠিক?
চিকিৎসক বলেন, "ত্বক অ্যাসিডিক যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই লালায় উপস্থিত এনজাইম এবং কর্টিসল সেই ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলিকেও মেরে ফেলতে পারে। এছাড়াও, থুথুতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ত্বককে সংক্রামিত করতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকে থুথু লাগালে মুখেরও ক্ষতি হতে পারে। মুখে লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া এবং আরও ব্রণ দেখা দিতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকে এটি লাগানো ঠিক নয়, এতে জ্বালাপোড়া এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।"
পরামর্শ অনুযায়ী ঘরোয়া প্রতিকার
ডাঃ মহাজন বলেন, "শুধু ব্রণর জন্যই নয়, মুখের প্রতিটি ধরণের সমস্যার জন্য মানুষ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার শুরু করে। যেমন মুলতানি মাটি বা চালের গুড়ো লাগানো। আজকাল মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরণের হ্যাক শেয়ার করে এবং মানুষ এগুলো সম্পর্কে না জেনেই লাগাতে শুরু করে। কিন্তু সবার ত্বক আলাদা এবং সব কিছু সবার শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়।"
তিনি আরও বলেন, "ব্রণ বা যে কোনও ধরণের ত্বকের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, এই ধরনের ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার না করে চিকিৎসা নেওয়া ভাল। এই প্রতিকারগুলির কোনওটিই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এই ঘরোয়া প্রতিকারের কিছু শতাংশ কার্যকর, তবে এর নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে যা আমাদের ত্বককে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। তাই, এগুলো গ্রহণ করার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।"