ইলিশ ইলিশ আর ইলিশ। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি ইলিশ খায় বছরে চার-পাঁচদিন। আর সারা বছর ইলিশের কথা চিন্তা করতে করতে দিন কাটায়। ইউটিউবে ইলিশের রেসিপির লাইক আর কমেন্টের বন্যা দেখলে মালুম হয় ইলিশ নিয়ে মানুষের আদিখ্যেতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এবার বিকল্প চাষ
তাই ইলিশকে যত বেশি সস্তায় পাতে দেওয়া যায়, তার জন্য চেষ্টারও ত্রুটি নেই। বিশেষ করে ইলিশের পরিমাণ আগের চেয়ে এখন অনেকটাই কম। পশ্চিমবাংলার নদীতে-উপকূলে ইলিশের প্রবল ঘাটতি। বাংলাদেশে এখনও ঘাটতি দেখা না দিলেও যা দাম থাকে, তাতে প্রকৃত ভাল ইলিশ কদাচিৎ ধরা পড়ে পাতে। তাই ইলিশের বিকল্প চাষ করতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র।
জাহাজে ইলিশ চাষ
এর আগেই পুকুরে চাষের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। এবার আর চাষ নয়, ল্যাবরেটরিতে ইলিশের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে চাষ শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইলিশের কৃত্রিম প্রজননে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। পুকুরে ইলিশ চাষের চেষ্টা মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে। ইলিশের সেই মনভোলানো স্বাদ বা আকার কোনওটাই মেলেনি। এবার তাই অন বোট ব্রিডিং পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে পদ্ধতি
প্রজননের মরশুম যখন চলবে, তখন সমুদ্রে জাহাজে মিনি হ্যাচারি তৈরি করা হচ্ছে। তাতে পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশ রেখে গবেষণা করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি যদি সফল হয়, তাহলে নদীতে ছাড়া হবে ইলিশের পোনা। এতে বাড়বে উৎপাদন। তখন সব সময় সমুদ্রের অনুকূল আবহাওয়া কিংবা ইলিশের মর্জির উপর হাঁ করে থাকতে হবে না। এই কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরাও।
'অন বোট ব্রিডিং'
'অন বোট ব্রিডিং' পদ্ধতি সম্পর্কে জানা গিয়েছে, বাছাই করে জীবিত পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশ ধরে জাহাজের হ্যাচারিতে রাখা হচ্ছে। হরমোন ইনজেকশন দিয়ে স্ট্রিপিংয়ের মাধ্যমে অথবা স্বাভাবিক উপায়ে পরিপকস্ফ করে পুরুষ ইলিশ থেকে স্পার্ম বের করে ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ফার্টিলাইজ করা হয়েছে। মোট ১৬টি ধাপ পার করতে হয় প্রজননের আগে। তার মধ্যে ইতিমধ্য়েই ৯টি ধাপ পার হয়ে গিয়েছে। আর সাতটি ধাপ শেষ হলেই এইভাবে প্রজনন সফল হবে।
আগে বিকল্প চাষ সফল হয়নি
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সেদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ২০১০-১১ সালে নদী ও সমুদ্র থেকে ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটার আকারের ইলিশের পোনা এনে ইনস্টিটিউটের পুকুরে ছাড়া হয়।নদী ও সমুদ্রের থেকে ইলিশগুলোর ওজন অনেকটাই কম ছিল। স্বাদও ভাল ছিল না। ফলে আগে ভালো হলেও তা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার মতো নয়। এখনও চাইলে যে কেউ পুকুরে ইলিশ চাষ করতে পারবেন। তবে তা ৫০০ গ্রামের বেশি হয় না।
পুকুরে চাষও এখনও সেভাবে সফল নয়
এর আগেও বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একাধিক জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ইলিশ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের ইলিশের হাব চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রের দুটি পুকুরে ইলিশ চাষের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সে সময় ব্যর্থ হয়। এরপর আরও কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় দুদেশের একাধিক এজেন্সি। সেটিও সফল হয়নি।