Benefits And Side Effects Of Poppy Seeds: পোস্ত বীজের শীতল প্রভাব আছে। গ্রীষ্মকালে পোস্ত দানা খাওয়া শরীরকে শীতল করতে কাজ করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পোস্তর মধ্যে পটাসিয়াম, ক্যালরি, প্রোটিন, ফাইবার, ফ্যাট, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পোস্ত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পোস্ত ক্যান্সার এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে। এটি হাড় সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। বাঙালি বাড়িতে গরমকালে পোস্তবাটা, পোস্তর বড়া, আলুপোস্ত, ঝিঙেপোস্ত, পটলপোস্ত নিয়মিত বানানোর চল বহুকাল ধরে। শুধু জিভের জন্য নয়। এ ব্যবস্থা স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেও। আসুন জেনে নেওয়া যাক বীজের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।
পোস্ত বীজের ঔষধি গুণাবলী
পোস্ত বীজের পুষ্টিগুণের তালিকা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য-সমৃদ্ধ পোস্ত বীজের উপকারিতা অগণিত। পোস্ত বীজের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে যেমন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিক্যাটালেপ্টিক, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, রিউমেটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিআর্থাইটিক, উদ্দীপক, মূত্রবর্ধক, অ্যান্টিস্পাসমোডিক, এমমেনাগগ।
পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে
পোস্তের বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার রাখার কারণে মুখে ব্রণ-পিম্পলের মতো সমস্যায় পড়তে হয় না। পোস্ত দানা চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি মুখের আলসারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
আপনাকে ভাল ঘুমোতে সাহায্য করে
ঘুমের সমস্যায় পড়তে হয় অনেককেই। এমন পরিস্থিতিতে পোস্ত দুধ খেতে পারেন। এটি ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে। পোস্ত দুধ আরও অনেক উপকার দেয়। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। আপনি যদি নিদ্রাহীনতা বা অনিদ্রায় ভুগছেন এবং আপনি প্রাকৃতিকভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে পোস্তের বীজ খাওয়া আপনাকে সাহায্য করবে। কারণ পোস্ত বীজে থাকা যৌগগুলি নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সহায়ক যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা আরও ভাল করতে সাহায্য করে। আর এর ফলে নিদ্রাহীনতার সমস্যাও কমে।
হাড় মজবুত করে
পোস্ত বীজ হাড় সংক্রান্ত সমস্যা যেমন জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি দূর করে। এতে ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে রয়েছে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-বি। এটি হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। হাড়ের ব্যথা এবং ফোলা থেকে মুক্তি পেতে, আপনি পোস্ত বীজের পেস্ট লাগাতে পারেন। আপনি দ্রুত এর বদল দেখতে পাবেন।
ব্লাড প্রেশার কমায়
পোস্তের বীজে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার। এতে অলিক অ্যাসিড রয়েছে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। পোস্ত বীজে আয়রন থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। পোস্তের বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি হার্ট সংক্রান্ত অনেক সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য করে। স্মুদিতে মিশিয়েও খেতে পারেন।
বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে পোস্তের ব্যবহার
পোস্ত বীজ যেমন অনিদ্রায় কাজ করে, তেমনি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনের কারণে এটি মস্তিষ্ককে সাবলীলভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং হতাশা ও মানসিক চাপ কমায়। ঘুমানোর আগে স্নানের জলে ৫-১০ ফোঁটা পোস্ত বীজের তেল মিশিয়ে স্নান করুন। এতে শরীরে শীতলতা আসে। পোস্ত বীজের ঘ্রাণ মন ও শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এর গন্ধ এবং শীতলতার অনুভূতি ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।
জ্বরের জন্য পোস্ত
আপনার জ্বর হলে পোস্ত বীজের উপকারিতা হয়তো আপনি জানেন না। পোস্তর শীতল প্রভাব এবং এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য জ্বর কমাতে বা উপশমে সাহায্য করে।
ত্বকের সংক্রমণের জন্য পোস্ত
পোস্ত বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এবং উচ্চ পরিমাণে লিনোলিক অ্যাসিড ত্বকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ত্বকে ইনফেকশনের সমস্যা থাকলে পোস্ত দানা ব্যবহারে ত্বকের অবস্থার উন্নতি হয়। সেই সঙ্গে ত্বকে একটা আলাদা আভা দেখা দেয়। আপনার ত্বকে যদি কোনো ধরনের ছোটখাটো ক্ষত থাকে, তাহলে সেখানেও পোস্তের বীজ লাগালে আপনি আরাম পেতে পারেন।
চুল পড়া কমায়
পোস্তের বীজে ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান রয়েছে, যা চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পোস্ত বীজের ব্যবহার চুলকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যবান করে। নারকেল তেলে পোস্ত দানা দিয়ে তেলে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর পর মাথার ত্বকে লাগান। ভাল ফলাফলের জন্য, এটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
পোস্ত বীজ খাওয়ার পদ্ধতি
পোস্ত বীজ সম্পর্কে একটি বিশেষ বিষয় হল এর একটি নির্দিষ্ট ডোজ রয়েছে, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি কারণ বেশি পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর জন্য, আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরেই খাওয়া উচিত।
কোন মরশুমে পোস্ত ব্যবহার করা ভালো
পোস্তের উপকারিতা অসংখ্য এবং এর ঔষধি গুণের কারণে সারা বছর এটি ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা পোস্ত বীজের শীতল প্রভাবের কারণে এটি শুধুমাত্র গ্রীষ্মের মরশুমে খাওয়া উপকারিতার বিশয়ে জোর দিয়েছে। শীতকালে বা বর্ষায় পোস্ত খাওয়া পরিহার করা উচিত।
পোস্তর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সব সময় পোস্তের বীজ খাওয়া উচিত। অত্যধিক পরিমাণে পোস্ত বীজ খাওয়া পেট ভরার অনুভূতি দেয়। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে পোস্ত বীজ অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত কারণ পোস্ত বীজের শীতল প্রভাব রয়েছে। গর্ভবতী মহিলা বা স্তন্যদানকারী মায়েদের পোস্ত বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।