প্রোটিন শেকপ্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের মতোই অপরিহার্য এক পুষ্টি উপাদান। শুধু জিম বা পেশী গঠনের মধ্যেই এর ভূমিকা সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিদিনের সুস্থ জীবনের জন্যও প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি। পেশী, হাড়, ত্বক, চুল ও হরমোন তৈরির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, ক্ষত সারানো এবং সুস্থ বিপাক বজায় রাখতেও প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডাঃ অংশুমান কৌশল (সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত theangry_doc) প্রোটিন, বিশেষ করে প্রোটিন পাউডার নিয়ে প্রচলিত ভয় ও ভুল ধারণার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রোটিনের নাম শুনলেই কেন ভয়?
ডাঃ কৌশলের মতে, কথাবার্তায় 'প্রোটিন” শব্দটি উঠলেই অনেকেই কিডনি ফেল, লিভারের ক্ষতি বা হরমোনের গোলমালের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু বাস্তবে, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ভয় বেশিরভাগ সময়েই ভিত্তিহীন। সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে গ্রহণ করলে হুই প্রোটিন সাধারণত নিরাপদ।'
তাঁর কথায়, 'সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন কেউ দ্রুত পেশী তৈরির লোভে শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৩ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে শুরু করেন। এই অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক গ্রহণই আসলে ভয়ের মূল কারণ।'
অতিরিক্ত প্রোটিন কি কিডনির ক্ষতি করে?
ডাঃ কৌশল ব্যাখ্যা করেন, গবেষণা অনুযায়ী অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে কিডনিতে হাইপারফিল্ট্রেশন হতে পারে, কিন্তু এটি কোনও রোগ নয়, বরং শরীরের একটি স্বাভাবিক অভিযোজন প্রক্রিয়া।
সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.২ থেকে ১.৬ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট। ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রে পেশী ক্ষয় রোধ করতে এই মাত্রা ১.৮ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
আসল বিপদ কোথায়?
ডাঃ কৌশলের মতে, বিপদ প্রোটিনে নয়, বিপদ নকল ও নিম্নমানের সাপ্লিমেন্টে। FSSAI ও জাতীয় পুষ্টি ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে তিনি জানান, ভারতে বিক্রি হওয়া প্রায় ৬০ শতাংশ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট মান পরীক্ষায় ফেল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে লেবেলে যা লেখা থাকে, বাস্তবে তার সঙ্গে মিল নেই—কম প্রোটিন, বেশি চিনি, এমনকি ক্ষতিকারক উপাদানও পাওয়া যায়।
তাই তিনি পরামর্শ দেন, NSF, Informed Choice বা USP দ্বারা সার্টিফায়েড ব্র্যান্ড বেছে নেওয়ার। অত্যধিক সস্তা প্রোটিন পাউডার থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কিডনি নিয়ে দুশ্চিন্তা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
প্রোটিন নিয়ে সবচেয়ে বড় মিথ হল, এটি কিডনি নষ্ট করে। ডাঃ কৌশল বলেন, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও প্রোটিন নেওয়ার পর ক্রিয়েটিনিন বা লিভার এনজাইম সামান্য বাড়তে পারে। কিন্তু এটি সাধারণত পেশীর কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত, কোনও রোগের লক্ষণ নয়।
তবে যাঁদের আগে থেকেই কিডনি রোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা গুরুতর ফ্যাটি লিভার রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই প্রোটিন গ্রহণ বাড়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সারকথা, প্রোটিন পাউডার নিজে কোনও ভয়ঙ্কর জিনিস নয়। সঠিক পরিমাণ, ভালো মানের পণ্য এবং নিজের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রাখলেই প্রোটিন হতে পারে সুস্থ শরীরের এক শক্তিশালী সহায়ক।