করোনার কারণে কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারি পার্ক। ফলে অখন্ড অবসর কাটাচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল থেকে ভাল্লুক, গন্ডার কিংবা হরিণ-বাঁদর-পাখিগুলির দর্শক নেই। কর্মীদের বাইরে আগন্তুক বলতে মাঝেমধ্যে শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ বনাধিকারিকরা। এই জেনে আসছিলেন সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাকি সকলেই।
দর্শক আছে , কিন্তু কারা
কিন্তু ভুল ভাঙল কয়েক দিন আগে। সকলের অলক্ষ্যে মাঝরাতে একদল আগন্তুক দর্শক সাফারি পার্কের রয়াল বেঙ্গল এর খাঁচার পাশে ঘোরাঘুরি করছে। টের পাওয়া গেল দুদিন আগে, রয়াল বেঙ্গল এনক্লোজার এর বাইরে বনদপ্তর এর লাগিয়ে দেওয়া কাঁটাতার ছেঁড়া দেখে।
হাতির দল সাফারির নিয়মিত দর্শক
কারা ছিঁড়েছে, ওই কাঁটাতার, নজরদারি শুরু করতেই চক্ষু চড়কগাছ পার্ককর্মীদের। তাঁদের এখন রাতের ঘুম উড়েছে। রাত হলেই সাফারি পার্কের বাইরে এসে জড়ো হচ্ছে দু-তিনটি বুনো দাঁতাল হাতি। তারা ঠায় সাফারি পার্কের দিকে তাকিয়ে থাকছে। মাঝেমধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে। তবে সবটাই গোপনে। ডাকাডাকি খুব একটা করছে না। ফলে আশপাশের গ্রামগুলোতেও তেমন টের পাচ্ছেন না কেউ।
রয়্যাল বেঙ্গলের এনক্লোজারের সামনেই হুজ্জোতি
আতঙ্ক আরও খানিকটা বেশি, তার কারণ যেখানটায় হাতির দল এসে ঘোরাঘুরি করছে এবং কাঁটাতার ছিঁড়েছে, তার ঠিক সামনের অংশটি রয়েল বেঙ্গল এর এনক্লোজার। যেদিন কাঁটাতার ছিঁড়েছে, রাতের দিকে আসায় সে সময়ে খাঁচার ভিতর থাকে বাঘেদের দল। তাই রক্ষে। নইলে কোনও দিন রাতে না দিনের বেলায় যদি এসে পার্কের মূল দেয়াল ভাঙার শুরু করে তাহলেই বিপত্তি। রয়্যাল বেঙ্গল খোলা জঙ্গলে বেরিয়ে গেলে কি বিপদ হতে পারে, তা চিন্তা করেই হাড় হিম হয়ে আসছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের।
এর আগে লেপার্ড পালিয়েছিল
এর আগে একটি লেপার্ড খাঁচা ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল। তাঁকে ফেরত আনতে গিয়ে কম খড়কুটো পোড়াতে হয়নি। যদিও সে নিজেই ফিরে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল।
নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে ডিরেক্টর বাদল দেবনাথ জানিয়েছেন টাইগার এনক্লোজার ঢুকে পড়ার ঘটনা সামনে আসতেই নিরাপত্তার' নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে জু অথরিটিকেও।
হাতির আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে
এই মুহূর্তে সাফারি পার্কে দুটি পূর্ণ বয়স্ক, দুটি মধ্যবয়স্ক এবং একটি রয়াল বেঙ্গল শাবক সহ মোট সাতটি বাঘ রয়েছে। শুক্রবাড় রাতে একটি হাতি সাফারির ফেন্সিং ভাঙার চেষ্টা চালায়। কর্মীরা সজাগ হয়ে তাড়িয়ে দেওয়ায় সে চেষ্টা সফল হয়নি। ভোর পর্যন্ত সাফারি পার্ক এলাকায় ঘোরাঘুরি করে সকালে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে চলে যায়। তবে ফের হাতির দল এসে তাণ্ডব চালাবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই।
একাধিক ফেন্সিং ভাঙতে অভিনব উপায় হাতির
মহানন্দ অভয়ারণ্যের মধ্যে সাফারি পার্কে অবস্থিত হওয়ায় কংক্রিটের দেয়াল তোলা সম্ভব নয়। তারজালির ফেন্সিংয়ে বিদ্যুৎবাহী তার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও তিনটি পাওয়ার ফেন্সিং রাখা হয়েছে। সাধারণভাবে প্রথম ফেন্সিং ভেঙে ফেললে পরের ফেন্সিংগুলি হাতির পক্ষে ভাঙতে পারা সম্ভব নয়। কিন্তু অভিনব পন্থা নিচ্ছে হাতির দল। তারা গাছ ভেঙে ফেন্সিংয়ে তারে ফেলে দিচ্ছে। ফলে তার ছিঁড়ে পাওয়ার কাট হয়ে যাচ্ছে। তার পরেই ঢোকার চেষ্টা করছে তারা। যা প্রতিরোধে এখনও পর্যন্ত দাওয়াই খুঁজে পায়নি বনদপ্তর এবং সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। তাই তারা এখন রাতে নজরদারি এবং টহলের উপরই জোর দিচ্ছে।